লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

তন্ময় ভট্টাচার্য

তোতাপাখি

ঘুরিয়ে কিন্তু লেখাই যেত—
‘অনন্ত সৌন্দর্য ফুঁড়ে উঠেছ, কাঁকই,
পালকে জলের দাগ, হাত মোছো আঁচলে যেমন’

অথচ জল খেতে গিয়ে এইমাত্র নদী হল
গলা-বুক, হাত কাঁপছে থরথর করে

কবিতা নয়
সহজ কিছু পথ্যের প্রয়োজন আজ

জ্বরের পর জ্বর আসছে
গান বাজছে নির্মলা মিশ্রের

গাইডবুক

একটা বাসরুটের শুরু ও শেষ জুড়ে দিত আমাদের
অথচ বাসে চেপে কোনোদিন যাইনি তোমার কাছে
নিঃসঙ্গ কবর থেকে, ভিখারির প্রত্যাখ্যান থেকে
বেছে-বেছে জেনে নিতাম নামকরণের অপূর্ব স্টপেজ

বাসেরা অপেক্ষা করত, ফিরে আসতে চাইনি যেহেতু
সাবধান করেছিল, একদিন জলে পড়তে হবে

ওদের

এ-বাড়িতে কোনো বিড়াল বাঁচে না
এমন এক সত্যের বিপরীতে
দাঁড় করিয়ে দিলাম এই কবিতা

বহুদূর কোনো ধাপার মাঠে
ওরা বেঁচে উঠছে
একে একে অস্থি-চর্ম-প্রাণ

ফিরে এসে যদি জিজ্ঞেস করে
ফেলে এসেছিলাম কেন
আমাকেও ওভাবে বিদায় জানাতে চায়

তরুণ সেই কবিদের কী পরামর্শ দেব!

রি-শাফল

মায়ের এমন বয়সেই আমার জন্ম হয়েছিল
সেই বয়সে পৌঁছে, আজকাল ভাবার চেষ্টা করি
মায়ের সম্বন্ধ নিয়ে কেউ হাজির হলে
আমি কি রাজি হতাম বিয়েতে

পুরনো ছবির দিকে একেকটা দুপুর বয়ে যায়
জানলা দিয়ে উঁকি মারে বাম জমানার অবকাশ
মা হওয়ার আগে মা যে-তরুণী
তাকে কি আদৌ ভালোবাসতাম

বাবা হওয়ার আগে বাবা যে-যুবক
থই মেলে না
পুরনো ছবির মধ্যে হেসে ওঠে আমারই আদল

বহুদিন

একটি হাত যতদূর থেকে ডাকতে পারে, ততদূরই আলো
যত কাছে এসে নির্জীব হয়, ততটুকু আয়ু—

এইসব তত্ত্বে আমার বিশ্বাস ছিল না
হাতকে হাতের বাইরে চলে যেতে দেখেছি বহুবার

চাদরের বাইরে, এমনকী, চিতার বাইরেও

এত দূর—অথচ একটুও রাগ নেই
এসব ক্ষেত্রে আমার আঙুলগুলো নালিশ হয়ে ওঠে

বহুদিন সেই হাতে আঙুল বসেনি

Facebook Comments

পছন্দের বই