কবিতা

উমা মণ্ডল
পরশুরামের কুঠার
১
একটানা ডেকে যাওয়া একটা প্রবণতা। দুঃখ হয় এইসব ডাক শুনে। ইঁট খসে পড়ে বাড়িটার; ডাক তবু এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। বাড়তে থাকে তীব্রতা। ওদিকে ইঁটের পরে ইঁট… ধুলো ধুলো কবিতারা সব চোখ মেলে দেখে, অর্বাচীন …
অথচ কোকিল ডাকবেই। বসন্তের পাখি ভুলে গেছে আদ্যাস্তোত্র। যখন তখন কুহুতান, ভীষণ অসুখ যেমন। আর অশ্বত্থের তীব্র মায়া; তবু থাকেনা অতীত, নিবিড় ছায়ার সন্ধিক্ষণ। এই পাখি, গাছ বিষয়ের পার্শ্বচর। চরাচর। মিলেমিশে গেছে ব্যাকুল, ব্যাকুল…
২
মাতৃগর্ভ ঈশ্বরের গৃহ অন্ধকার, শ্যামা তপ্ত কাঞ্চনবর্ণের ঊষাকাল বেশ তীব্র রক্তরসে রাগালাপ দড়ি বাঁধে আগামীর সে বৃক্ষ হবে, সে মস্ত হবে
তবে সময়ের ছক বড়ো কুকথা বলে ঐহিক তাকে শুনতে চেওনা তাকে বুঝতে চেওনা নীরব নীরব থাক পক্ষকাল থেকে- অন্য পক্ষকাল
এই বেশ ভালো আছি, এই বেশ সুখে আছি ওদিকে শকুন হাসে
৩
কাহিনি বলেছে হাতে লেগে থাকা রক্ত- তাঁর কিন্তু নাম আছে ডেকে দেখো সাড়া দেবে চামড়ার তলদেশে যে জীবন বয় অন্তঃসলীলার ব্যথা; ও অভিশাপ পেয়েছে
জিনগত ব্যাখা কিন্তু অঙ্ক কষে দেবে ক্ষেত্রফল মধ্যে তুমি একা উচ্চারণ করে পঞ্চভূত, স্তোত্র; হু হু হাওয়া অহম, অহম
মুছে যায় বলাকার স্রোতে………
তারপর তীব্র ঘৃণা থেকে রক্ত ঘেঁটেঘেঁটে এক মালা ছিল- বংশধর বিশেষ
৪
ঘর থেকে যতটা দুরের পথ মায়াময় ততটা দুরেই সাতজন্ম এক ঝটকায় ধুলো, এক ঝটকায় মৃত্যু ইঁট খসে পড়ে বাড়িটার; ঘুমে জেগে হাত তুলে ডাকে কোকিলের গুণগুণ খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো………
শৈশবের ছোট চারাগাছ মুখে দেয় ডালভাত- ‘মা’…… বিশ্বাস হয়না জটার অগ্রিমে কান পেতে দেখো অশ্বত্থের ভাঙা ডাল থেকে উঠে বসা কুঠারের শব্দকোষ বলে হ্যাঁ ‘মা’……. ছিল
৫
কবিতার ভাষা আজ ঠাণ্ডায় কাতর করোনার তীব্র মহামারী কপালের জ্বরে তেতো তেতো ভাব বিস্বাদের অমরাবতীতে হাহাকার দুধ সাবু মুখে ওঠেনা, ঠোঁটের ধারে বসে থাকে হাত ধরে পার করে দেয় লাল টিপ আগুন আগুন সন্ধিক্ষণে যে পদ্মের চোখ জাগে লহমায় সেই লাল টিপ থেকে রক্তনদী, দেবী ও মানবী হ্যাঁ ‘মা’…………ছিলো
ধুলো ধুলো কবিতারা সব চোখ বুজে থাকে
৬
এক পরশুরামের হাত কুঠারের বেগ এনেছিলো পৃথিবীতে। সেই স্রোতে ভেসে গেছে ইহকাল, পরকাল। নদী নদী ব্যাথা, ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী; জাতক জাতক গন্ধ। কুঠারের হাতে থাকে লাল জবা। চোখ ছিলো। থেকে জল ঝরে ঝিরিঝিরি।
পদ্ম থেকে সাপ, ছকে গ্রহদোষ। এইসব বিশেষ্যের কথা থাক। আসলে পরশুরাম কোন এককালে কুঠারের বলে নাড়ি কেটেছিলো নিজের, লোকে বলে মায়ের
এই বাড়িও শাপিত। মাতৃহত্যা দোষে কাঁপে। আবার ইঁট খসে পড়েছে ……ভীষণ রকম এক ডাক, কোকিলের আলজিভ থেকে ভেসে আসে। কুঠার, কুঠার।
কুঠারের যন্ত্রণা কেউ বোঝেনা। শুধুই ঘাতক কিনা
Facebook Comments