লেখক নয় , লেখাই মূলধন

শিখা মৈত্র

আমার জীবনসঙ্গীর শেষ দিনগুলি

অমিতাভ মৈত্র, এই মানুষটিকে আমি আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলাম, খুব নম্র, বিনয়ী মানুষ ছিলেন। এত বড়ো পদে চাকরি করতেন, কিন্তু সব মানুষের সঙ্গে সমানভাবে মিশতেন, সবাইকে সম্মান করতেন। কখনো কোনোরকম অহংকার ছিল না ওনার মধ্যে। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর উনি লেখার প্রতি আরও বেশি সময় দিতেন। প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধ্যেবেলায় ওনাকে দেখেছি নিয়ম করে বই, খাতা, কলম নিয়ে বসতেন, পড়াশোনা ও লেখালেখি করতেন। এমনকি যখন সবার খেতে বসতেন তখনও অন্য হাতে বই খুলে উনি কিছু পড়ছেন। কোনো লেখা শেষ হলে আমাকে সেটা পড়ে শোনাতেন, আর প্রথম বইটি উনি আমার হাতেই তুলে দিতেন। চাকরি সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। সব জায়গায় মানুষের কাছে প্রচুর ভালোবাসা ও সম্মান পেয়েছেন। উনি সি.ও.পি.ডির পেশেন্ট ছিলেন। কখনও কাউকে ওনার অসুখের কথা প্রকাশ করতেন না। আমরা জিজ্ঞাসা করলে সবসময় বলতেন, আমি ভালো আছি। উনি চলে যাওয়ার দশদিন আগে থেকে হঠাৎ একটু বেশিই শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন। ভাক্তার দেখানো হলে তিনি বলেন অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হবে চ্যানেল করে। বাঁহাতে চ্যানেল করে দিনে দুবার অ্যান্টিবায়োটিক চলছে, উনি সেই অবস্থায় রিলকে নিয়ে লেখাটা লিখছেন। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কষ্ট হচ্ছে না তোমার? তৎক্ষণাৎ বললেন না, কোনো কষ্ট হচ্ছে না। শেষ লেখার প্রিন্ট করনোর জন্য উনি যেতে পারেননি, তাই ছেলেটি বাড়িতে এসে লেখা নিয়ে যায়। সেই প্রুফ দেখার জন্য নার্সিং হোম থেকে ২১ তারিখে ফিরেই আমাকে বললেন, তাড়াতাড়ি ফোন চার্জ দাও, আমার কিছু জরুরি মেসেজ করতে হবে। রাত্রি ৭:৩০ টা, কিছুক্ষণ মেসেজ দেখার পর উনি ঘুমিয়ে পড়লেন। পরদিন অর্থাৎ ২২ তারিখ সকাল থেকে আর কোনোভাবেই ভেকে ডেকে ওনার সাড়া পেলাম না, আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সবসময় বলতেন দুজনে একসাথে আরও অনেকদিন বাঁচবো আমরা, সেই কথা আর রাখতে পারলেন না।

Facebook Comments

পছন্দের বই