লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

সুতপা চক্রবর্তী

মাতার আদেশ হয়, পিতা যান ভিক্ষাপাত্র নিয়ে
পৃথিবী ভ্রমিয়া আসি তুলি দেন অন্নপূর্ণা মা’য়ে

রোগের নগর, শোকপল্লী একে একে কালবেলা
মাতার চরণে ঢালি দেন পিতা ব্রহ্মাণ্ডের মেলা

সন্তান সন্ততি সব প্রাচীরের কোণে পড়ে রয়
আকাশ ফাটিয়া অন্ন পড়ে, মানবের ক্ষয় হয়

মাতার আদেশে পিতা মম জগতের আয়ু পান
ভিক্ষার পাত্রটি ঢলে পড়ে শিঙ্গা ভেঙ্গে খানখান

নগর নগরী নট নটী চন্দ্র সূর্য লতাফুল
পিতার বসন উড়ে যায় মানুষের উপকূল

চরণে ভ্রমর আসে, ফুলে আসে মধুরূপী জল
মাতার আদেশ হয়, পৃথিবীর চক্ষু টলোমল

অন্নের সমান ধন নাই, পৃথিবীর পানে চাই
সকলি অলীক! মোহমায়া,মায়া কাটি— কেটে যাই

বৃষ্টিতে আগুন জ্বালি শরীরের বাড়ি বহুদূর
সুরের আবেশে মেতে ওঠে রজনীরা, আহা সুর

বাজিয়া উঠিল জলেস্থলে গাঢ় নিশীথের বুকে
হাজার জোনাকি পাক খেয়ে যায় তীব্র রতিসুখে

ভৈরব নগরী নীলকণ্ঠ পলাশের থোকা ফুল
রজনী সাপিনী ফোঁস করে খুলে তার এলো চুল

রজনী আঁধার চকমকি নুড়ি,কড়ি খেলে যাই
বৃষ্টির আগুন সর্বনাশা জলবাড়ি পুড়ে ছাই

উঠান জুড়িয়া চাঁদ বসে, জলে পড়ে তার ছায়া
জন্মের ভিতরে জন্ম ঘুরে;দেখি সব শূন্য, মায়া…

বৃক্ষের আড়ালে তারা দেখি, জমিনের আঁকা বাড়ি
মাটিতে আঙুল পড়ে জাগে লক্ষ জোনাকির শাড়ি

সুরের ভিতরে কান পাতি, জোনাকির আলো পাই
খাঁচার ভিতরে চেনা পাখি খাঁচাটিকে ভেঙ্গে খাই

নয়ন পথের পরে,চক্ষুগামী হয় স্বর্ণ দেহ
আঁচলে মাসিক ঋতু মুখ ঢাকে, দেখে নাই কেহ

লাজের বরণ খুলি, একে একে গত হয় দিন
মাসিক ফুলের চক্রবাঁকে প্রজাপতি হয় লীন

হাজার রকম ডানা মেলি, চক্ষু খুলি, চক্ষু মুদি
বুকের ভিতর অশ্রু ঝরে পড়ে, অশ্রু দিয়ে বাঁধি

প্রতিটি মাসের শেষে ঘরে পলাশের ফুল ফোটে
আগুন রঙের ফুল দেয় বৃক্ষ, তীব্র বেগে ছোটে

নয়ন পথের দিকে; ধানজমি আস্ত জলাশয়
শূন্যের ভিতরে শূন্য আঁকি, আঁকি অনন্ত হৃদয়

বৃক্ষের গোড়ায় জল দাও, মাসিকের দাও পানি
আঁচলে সুপুরি বাঁধি,চক্ষু খুলে কড়ি দিয়ে কিনি

সোনার শরীরে লালফুল ফোটে, মুখ রই ঢেকে
নয়ন পথের স্বর্ণ দেহ ছাইচাপা পড়ে থাকে

থামতে চাইনি আকাশের মাঝে; একদল পাখী
ঘুরিয়া ঘুরিয়া দেখে গেলো আমাদের আঁকিবুঁকি

বনের ভিতরে বৃক্ষ পুঁতি, লুকলুকি তুলে খাই
পাখীরা আমার সই হয়, আঁচলের তলে ছাই

শেফালি ফুলের লক্ষ তারা ভোররাতে ফুটে রয়
বাঁশের সাজির সারা গায়ে মৃদুমন্দ বায়ু বয়

উঠানে বালক উঠে আসে, বালিকারা আঁকে ছক
মাটির উপরে পাথরের টান, তেঁতুলের টক

কর্মের পুরুষ পূজা পেয়ে যান লক্ষ্মী বারে বারে
মাটিতে চালের গুঁড়ি দিই, জন্ম যায় দূরে সরে

রাতের আঁধারে বনশিশু, নরশিশু সাথে খেলে
রজনী সাপিনী ফোঁস ফোঁস করে এঁকে বেঁকে চলে

গহীন বনের গাঢ় ঘরে পৃথিবীর ঘুম পায়
জন্মের সমান মৃত্যুসখা মম জন্ম খেয়ে যায়

আলোর প্রদীপ নিয়ে বসে আছে মহাকাল পিতা
চরণে ডমরু তাঁর বেজে ওঠে রুনুঝুনু; মাতা

আসিলে বৈঠক বসে, মেনকার পুত্রী ভাত খায়
মাটির গেলাসে ব্রহ্মান্ডের ছায়া পড়ে, থালা যায়

সরিয়া; মেনকা পুত্রী তিনি আলোফুল শিবজায়া
চৌদিকে রন্ধন বাটী কৈলাসের বঁধূ মহামায়া

গরাসে গরাসে ভাত তুলে মুখে দেন; গালভরা
পানের ডাবর; পৃথিবীর চোখ ছলোছলো, হারা

মণির ভেতরে বসে আছে পিতা, মহাকাল ঘোর
আলোর প্রদীপ তার নিভে আসে তপ্ত বালুচর

মাটির থালায় ভাত ওঠে, পেটে ওঠে নাড়ি ধন
মেনকা পুত্রীর চোখে জল আসে, আসে শুভক্ষণ

আলোর প্রদীপ নিয়ে, ব্রহ্মাণ্ডের ছায়া পড়ে, হায়!
চরণে ডমরু তাঁর রুনুঝুনু বাজে— বেজে যায়

 

Facebook Comments

পছন্দের বই