লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

সোহম চক্রবর্তী

আমি

শহর থেকে অনেক দূরে গেলে ছোটো মফস্সল,
যেয়ো না অত দূর।
মফস্সল থেকে আরও অনেক দূরে অজ পাড়াগ্রাম,
যেও না অত দূর।

বরঞ্চ, দ্যাখ—

শহর থেকে অনেক দূরে ছোটো মফস্সল,
মফস্সল থেকে আরও অনেক দূরে অজ পাড়াগ্রাম
ছুটে যায় জাতীয় সড়ক।

জাতীয় সড়কের পাশে ফালি ফালি রোদের মতন
বসার জায়গা—
শানবাঁধানো, ছাউনি দেওয়া পঞ্চায়েতের; ছোট্ট দেয়ালে
গা-ঘেঁষা অক্ষরে লেখা: ‘দাঁড়াও, পথিক-বর…

…তিষ্ঠ ক্ষণকাল!’

যেহেতু তুমি একটা-দুটো কবিতা পড়েছ, তাই ভাবছ
কেউ তো দাঁড়ায়, কেউ তো দাঁড়াবেই—
আরও অনেকগুলো পড়লে বুঝতে

আসলেতে দাঁড়ায় না কেউ।

কাম

জোনাকিকে পিষে মারলেও
আলো তার পেছন ছাড়ে না—

ফুলে ওঠে কপালের রগ,
জ্বর আসে— আর
তোমার না-আসা শুধু

দপ্ দপ্ করে গোটা দেহে।

আত্মঘাতরীতি

‘তোমাকে না-পেলে আর বাঁচব না আমি’।

এ-সহজ সত্যের বুকে
তৃতীয় শ্রেণির কিছু বাংলা সিনেমা
যুগে-যুগে ছুরি মেরে গেছে।

আমরা নায়ক নই, নায়িকাও নই,
একটি জীবনে
সাইড-রোলের বেশি আমাদের বরাত মেলে না।
রংচঙে মুখে তাই তোমাকে ও-কথা
জানাব, তা চিত্রনাট্যে নেই।

তোমাকে না-পেয়ে তাই নিশ্চিত মৃত্যুটি খুঁজি
একা-একা। খুঁজে আনি কবেকার
ব্লেড, দড়ি, ফলিডল— তবে
তৃতীয় শ্রেণির কিছু বাংলা সিনেমা
এইসব উপায়ের প্রতি আমাকে সন্দিহান করে।

তোমাকে না-পেয়ে আমাকে তো মরতেই হ’ত,
তাই আমি কবিতা লিখেছি।
তৃতীয় শ্রেণির কোনো বাংলা সিনেমা, ভাগ্যিস
ও-পথে হাঁটে না!

গতরাত্রে বৃষ্টি হয়েছিল। ঝরেছিল ফুল…

আমার বিছানায় এক শিউলিগাছ আছে।

এমনিতে চোখেও পড়ে না, শুধু
খরতপ্ত ঘুমে
সারা শরীর দিয়ে আমি শিউলিগাছ হই—

ডেঁয়োপিঁপড়েরা হাঁটে, সকরুণ
গানের পাখিরা
ঠুকরে ঠুকরে চলে এ-ডাল ও-ডাল;

গতরাত্রে বৃষ্টি হয়েছিল। ঝরেছিল ফুল।
এ-সকালে রোদ তাই চিকন-চিকন— ভ্রমরের মতো

কুসুম কুড়োতে আসে বালিকাটি কুসুমতুলহ,
ঝুঁকে পড়ে চোখের পাতায় এই দৃশ্যটিকে

আমি সবিশেষ ঈর্ষা করি, এই দৃশ্যে
প্রভু আমি অন্ধ হয়ে যাই…

গতরাত্রে বৃষ্টি হয়েছিল। ঝরেছিল ফুল

…একাই, একাই!

ফেব্রুয়ারি

একটি হাওয়া মনখারাপের, একটি হাওয়া সর্বনাশী—
একটি হাওয়া পার ক’রে ফের তোমায় কেবল দেখতে আসি…

একটি হাওয়া দূর শহরের বাসন্তী রং সরস্বতী,
কার হাতে কোন হাতের বাঁধন দেখেই আমার কী দুর্গতি

বুঝলে না আর, সব কথা কার কে-ই-বা কখন বুঝতে পারে…
একটি হাওয়া বছর ঘোরায়, বান্ধবীদের বয়স বাড়ে।

একটি হাওয়া দূর বয়সের সাইকেলে ঠেশ একলা ছেলে,
একটি হাওয়া গন্ধপুষ্পে পারফিউমের আভাস ফেলে

ঝড় তুলে যায় বুকের ভিতর দূর শহরের হলদে শাড়ি—
ফিরিয়ে দেওয়া সেই মেয়েটির চোখের মতন ফেব্রুয়ারি…

সোহম চক্রবর্তী

জন্ম ১৯৯৭ সালের ৩১শে অক্টোবর, ভারতবর্ষের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত নদিয়া জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগরে। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল থেকে ২০১৪ সালে মাধ্যমিক ও ২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা এবং অনুসন্ধান সংস্থান কলকাতা-য় রসায়ন বিষয়ে সংযুক্ত স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রিলাভ ২০২১ সালে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Rutgers, The State University of New Jersey-তে রসায়নে ডক্টরেট পাঠক্রমে গবেষণারত। লেখালিখির শুরু খুব ছোটোবেলা থেকেই। প্রথম কবিতা প্রকাশ স্থানীয় ক্লাবের পূজা পত্রিকায়, মাত্র ছ-বছর বয়সে। পরবর্তীতে আত্মপ্রকাশ প্রথম দশকের মাঝামাঝি, ‘কথা-কোলাজ’ পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে। কালক্রমে কবিতা প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায়। কাব্যগ্রন্থ: ‘নির্জনতাগুচ্ছ’ (২০১৯)। কবিতার পাশাপাশি বিচরণ প্রবন্ধ, মুক্তগদ্য ও অনুবাদেও। লেখালিখির বাইরে প্রিয় শখ বই পড়া ও গান শোনা।

পছন্দের বই