লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

সোনালী চক্রবর্তী

গুস্তাখিয়া

“দুনিয়া মে দুখ অউর ভি হ্যায় মুহব্বতকে সিভা”

কিছু বিস্ময় রহিয়া গেল… এত যে চাঁদ পোড়ালাম, কিছুতেই বুলবুলি পেরিয়ে রাঙা দিঘিতে আলো জ্বলল না। জোনাকি ভেঙেচুরে ছিটিয়ে দিলাম শবাগারের মসৃণ দেওয়ালে, তবু শ্যাওলারা ডানা খুঁজে পেল না। আয়ত্বে এল না কোনো নাজুক হরকত। সংসারসিদ্ধ? অসাড়চিত্ত। অথচ এত হাঁস ফুটেছিল, কচুরিপানায় আধডোবা দেবীমুখ বেয়ে, সুখ শব্দের আগে প্রথম স্বরবর্ণ এত আদরে কেন জড়িয়ে থাকল, জারিন-এ-জুনেদের টের পাওয়া হল না।


“গিনতি উসি কি হোতি হ্যায় যো হাসিল না হো সকা”

ক্রিয়াপদহীন নির্ভরতা চাওয়ায় মণিপুরে কিছু আগুনের দান জমা হল, বিশেষণহীন মুক্ত হতে গিয়ে করতল উপুড় করে আমি অবান্তর ক্ষমা এঁকে দিলাম। খোয়াইশ না জাগুক অথবা আসুক বিতৃষ্ণা বেইমতেহা, নৌকাকে ঘনিষ্ঠ হতেই হয় তরঙ্গলীলায়। জীবন এমনই, চরাচর নির্লিপ্ত থাকে প্রত্যাশা পরাজয়ের এক্কা দোক্কায়। বিদ্ধ করতে বা সম্মাননায় ক্রুশের বক্তব্য কেউ শুনেছিল অথবা অলিভ পাতার?


“সস্তি জিন্দেগি, জিনে কে তরিকে মেহেঙ্গে”

চাঁদ ছিঁড়ে ছিঁড়ে কি আর ভাঙাচোরা অন্ধকারের দাবিদাওয়া ঢাকা যায়? আমি ভিজতে বসলেই শাসনের সাতকাহন বোনো, অথচ সূর্যপ্রণাম করে রোজই অজস্র শিশিরের মৃত্যুকে স্বীকৃতি দিয়ে থাক। ভেবে দেখ, পৃথিবীর কোথাও তা থৈ বলে কোনো গ্রাম আছে কি যেখানে আবরণ উদাস কোনো দিওয়ানি পা ফেলতে পারে নির্দ্বিধায়? হেন মন্দিরও তো দেখলাম না, যার ভাস্কর্যে ন্যূনতম আবরণে যক্ষীর নিজেকে মোড়ার অধিকার রাখা হয়। এখন বুঝি কতটা অন্ধত্বপ্রবণ হলে সহস্র সহস্র স্বাধীনতাকে চিড়িয়াখানায় কুপিয়ে উচ্ছ্বসিত করতালি চাওয়া যায়।


“দেখ কর আয়িনা তসল্লি হুয়ি কোই অউর ভি হ্যায় অকেলা”

ভাঙা ভাঙা শার্সির ভিতর যেভাবে প্রাসাদ হবে বলে ধুলো আর খড়কুটোরা পায়রার ঠোঁট বেয়ে আসে, দেখেছ এক কর্মী নির্ভর ভাঙা জাহাজের কারখানায় কীভাবে ছেনি হাতুড়িরা তাকিয়ে থাকে? আমিও একদিন বুড়ি ছোঁব বলে রূহ খুঁটে খুঁটে শিকড় ভাসিয়ে রাখি। দরিয়ার পরিণতি রেগিস্তান হবে একদিন, জলসাঘর ভেঙে গনিমতে বসবে যত আদিম পরিযায়ী, বাষ্পের বরফ হতে হতে পেরিয়ে যাব সভ্যতা, জেলিফিশ যতই নমনীয় হোক, ভাস্কর কি তার থেকে খাজুরাহো আশা করে?


“কুছ নেহি থি তো খুদা থা, কুছ নেহি হোতি তো খুদা হোতা”

আগুনের স্নান শেখা হবে বলে বার বার বরফের ছ্যাঁকা খেয়ে ফিরে আসি। বাঁচিয়ে রাখি সে-ক্ষতের নীল চকমকি সঙ্গোপনে। বিষাদের পাখি মাতাল হলে ঠুকে পুড়িয়ে নিয়ে বেড়ে দি কবিতার নামে তোমাদেরই পাতে। তোমরা বুঝতে পারো না, লবণ কোথা থেকে মিশলে মাংসই চিরদিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখাদ্য হয়ে ওঠে।

Facebook Comments

পছন্দের বই