কবিতা
সৌমাল্য গরাই
প্রস্তাবনা
একটি লাইন থেকে
দূরে সরে গিয়ে
অস্পষ্ট মমির মধ্যে খুঁজে পেল কেউ
ধ্বংসাবশেষের নীচে করুণ সংকেত
অলিখিত বৌদ্ধগুম্ফা
ভিক্ষার আড়ালে তার ধ্বনিসংঘ পাতা
তার থেকে দূরে
পানাপুকুরের নীচে হারিয়েছে কেউ
গুপ্ত পাপ, মিথুন কৌশল
চরাচরজুড়ে শুধু হাঁস খুঁটে খুঁটে খায়
প্রকৃত শামুক যারা গভীর জলের গানে
খুলে দেয় শালুক দুয়ার
অন্তিম লাইনে এসে লৌহকণা, রক্তবীজ ফেটে
ফিরে আসে অচেনা হাড়ের তলদেশে
ব্যক্তিগত মৃত্যু প্রস্তাবনায়
টের পাই, একটা শূন্য সাদা পাতা
মাথার ভিতর ঘুরে ঘুরে
আমাকে খেলায়
ছায়াছবি
রাত্রি এল, সঙ্গে দু-একটা তারার ভাসানো জেলে নৌকা
একসাথে হেঁটে যাব, এমন আকাশপথে ছোটো গ্রামপুঞ্জ
জ্বলে উঠল দেশলাইকাঠির মতন
হাওয়াদের বিবাহ লেগেছে
কোথাও সানাই নেই অথচ নীচের
মণ্ডপে বঁধূরা মিলে শঙ্খ বাজিয়েছে
নেশায় মাতাল চাঁদ, বড়ো একা, টলমল দেহে দিঘিটির কালো জলে
ওর ভাঙা বুক সকরুণ কাঁপিতেছে
কুসুম-কথা
কুসুম, তোমাকে বলি শোনো
চিরস্তব্ধ সময়ের কাছে
প্রার্থনা করেছি সেই মুহূর্তের হাত
শরীরের তাপ নিভে গেলেও তোমাকে
দিয়ে যাব এ-জীবনে না-হওয়া সংসার
সাবধানে রেখো অশ্রু, লুকানো সিঁদুর
দূর কক্ষপথে
এখন সবাই আমরা পুতুলের মতো
যন্ত্রদের কাছে বলি যন্ত্রণার কথা
শরীরের-ও মন থাকে কে-ই-বা বুঝেছে
পরিচিত টিলাটির কাছে আর
দাঁড়াতে পারিনি কখনোই
দীর্ঘশ্বাসে আসে শুধু
নিরুপায় পরিত্যক্ত হাওয়া
মনে হয় সূর্যাস্ত আসলে
তোমার-ই গোপন চলে যাওয়া
তুলাযন্ত্র
বৈরীপথে আটকে পড়েছে
পাথরের প্রসবসমূহ
জলহীন, শব্দহীন
খোলসের স্তূপে
ফুটে আছে মাতৃমুখী বীজ
তাদের আচ্ছন্ন ডাকে
ব্রহ্মাণ্ডের শীর্ষদেশে শুদ্ধ সহজিয়াদের
কম্পিত শ্রীখোল বাজে। আলো কৃষ্ণ হয়ে আসে
নীল নভোদ্বীপে
নিঃশব্দে হাওয়াতে শান দেয় বর্গীমেঘ।
হাতের কৃপাণরূপে আধখানা চাঁদ জেগে ওঠে
শেষ রাতে তার ক্লান্ত ঘুমের সুযোগে
দ্রুত গতিবেগে অশ্বারোহীর শিকল খুলে
পরিপূর্ণ সূর্যডিম্ব নামে গড়াতে গড়াতে
এবং এরই পাশে
দু-টি সম্ভাবনা নিয়ে আটকে থাকে যে-ভ্রূণ
তার মতো জন্ম
তার মতো মৃত্যু
আমাদের হৃদপিণ্ডে স্পন্দিত হতে থাকে
নভোশ্চর
মনে ভর দিয়ে হাঁটি। কেন-না মনের চেয়ে দ্রুতগামী কিছু নেই। জীবন সড়ক জুড়ে বিসর্পিল পথ একইরকমভাবে ঘাপটি মেরে আছে। সব রাস্তা, সব বিজ্ঞাপন অবিকলভাবে রূপায়িত।
তাহলে আমি কি পাব না সেই অবারিত মুক্তদলবিশিষ্ট পয়ার যামিনী? দ্বৈতশিশুর ন্যায় যাদের পিঠে শজারুর কাঁটা গেঁথে দেওয়া আর তার অভ্যন্তরভাগে রয়েছ সুন্দরী তুমি! মুকুলিত, গুঞ্জনময়।সেকেন্ড বড়ো জোরে ছোটে, তাই তোমাকেদেখামাত্র ফিরে আসতে হল বিজুরীপলকে।প্রত্যাবর্তন কালে দেখি— আমি কোথায়? তুমিই দাঁড়িয়ে আছ ঘরে।
চমৎকার স্বনকের কম্পনে পেন্ডুলাম দুলে উঠল। আশ্চর্য এ কী হল!
তুমি বা আমি নাই, ঘরটাই নিজেকে দু-রকমভাবে দেখছিল

সৌমাল্য গরাই
জন্ম ১ জুলাই, ১৯৯৬। বাঁকুড়া জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম, নাকাইজুড়ি। সেখানেই তাঁর জন্ম, সেখানেই শিক্ষার সঙ্গে বেড়ে ওঠা। বাঁকুড়া ক্রিশ্চান কলেজ হয়ে বর্তমানে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তরে পাঠরত। কবিতাই তাঁর নিভৃত আশ্রয়, বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কবি লিখে চলেছেন। তাঁর মধ্যে অন্যতম দেশ, কবিতা আশ্রম, কৃত্তিবাস, শ্রীময়ী, লালমাটি, রুখুডি ইত্যাদি।