লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

সৌমিক মৈত্র

প্রার্থনা…

আমার বাড়ির উঠোনে দুটো গাছ—
জবা আর করবী।

মা রোজ সকালে স্নান সেরে, লাল জবা তোলে—
ঠাকুরের পায়ে দেয়।

আমি ঠাকুরের পায়ে মাথা রেখে প্রার্থনা করি।
মায়ের পায়ে যেন সাদা করবী দিতে না হয় কখনো।

মানতাসা

কাঁটাতার ঘিরে রাখে লালচে-ধূসর আলোককুণ্ডলী।
এই বিচ্ছিন্নতা অমূলক, তবু তুমি আঁচড়ে কামড়ে ভাঙো আমায়।
বিলুপ্ত হোক প্রতিষেধক, উপশম।
রহস্যময় উপনগরীর আহত সিংহদ্বারে ছড়িয়েছে মনুষ্য লোম।

এত রক্ত কেন মাখো—
প্রকৃতির চক্রাকার দিগন্তে আহত পাখির মতো।
তুমি প্রগতির বুক কেটে অন্তর্বাহিনীকে মুক্ত করে দাও এই প্রগলভ মরুবালিকণায়।
স্থিতু হও, মিঠে খেঁজুরের গন্ধমাখা বিকেলে।
যেখানে মৃত্যু যায়—
তার পিছে পিছে তুমি কোন লোভে গেলে?

নিশি কোলাহল নির্বিকার, গ্রহণ সকালে যেন মরক লেগেছে শঙ্কিল হৃদযন্ত্রে।
এ নৈর্ঋত মেঘ আহার্যবিহীন আপরাজিতা— দু-ফোঁটা কান্নার লোভে মাটি ছুঁয়ে হয়েছে ধোঁয়াশা।
অনারম্বর তুমি, মৃত কবজি থেকে ঝুলে থাকে—
প্রিয় মানতাসা।

যন্ত্রণা…

মৃতপ্রায় শরীরে—
ব্যথার রাক্ষস জেগে ওঠে।
আঘাতের নকশায় যন্ত্রণা ফুল হয়ে ফোটে।

মিনে করা কাটা দাগ,
রক্ত শুকনো, আলপনা—
দু-ঠোঁট বাক্যহীন, বেদনার সুতো দিনে বোনা।

এ-ক্ষত নির্বোধ, ছেড়ে যায় নিঃশ্বাস, প্রাণ।
নিঃস্ব কবর, একা—
পাশে তার বিষাদখাদান।

চামড়ায় শাদা ছোপ—
ফোস্কায় জ্বলে গেছে মুখ
যার দেহে ক্ষত নেই, তার শুধু মনের অসুখ।

রহস্য!

মশলার গন্ধ লেগে চঞ্চল, লাস্য বিকেলে।
যেন ক্যাওড়া জলে ভেজা মিঠে জায়ফল।

আফগানি কেশরের হলদে লালে,
ঢাকা পড়েছে মানস সরোবরের শাদা।

তুমি তেজপাতা ঠোঁটের—
হেমন্ত ঝাঁজ মিশিয়ে দাও গন্ধহীন রাতে।

দারুচিনি দেশ ঋতুমতী হল,
তুমি এলাচের স্বাদ বলে শুকনো ঝাল মাখিয়েছ গালে।

এ-জ্বালা তীব্র নয় জেনো—
এ শুধু রঙের আড়ম্বর, মিশে থাকা
সান্ধ্য বকুলে।

প্রলেতারিয়েত

অবসর বসে থাকে, শুকনো জানালায়।
মেঠো গন্ধের শোক—
লেগে আছে রক্তাভ পায়ে।

আহতের মতো দুই মৃত চোখে মাংসের লাল,
ধূসর জানালা থেকে ঝুঁকে আছে শূন্য কপাল।

বিষাদ মাখানো চোখে, উঁকি দিয়ে চলে গেল প্রেত—
প্রলেতারিয়েত।

 

Facebook Comments

পছন্দের বই