হাইকু
সৌরভ দত্ত
পেরেক
ঘুমের ঠোঁটে
একটা পেরেকের
ঠকঠক শব্দ।
পরাজয়
নির্জন শালিক জানে
পরাজিত গাছের
শোক বলে কিছু নেই।
বাঁচা
নদী আর রেললাইনের
কতটুকু ফাঁক যেখানে
জীবন ঢুকে যায়।
পতন
পাহাড়ি ঝরনা যেন
গ্র্যান্ডেলের মা
খসে যাচ্ছে প্রস্তর স্ফটিক।
পোখরাজ
সে অগ্নিব্রত
সংকেতবিহীন
খুঁজছে পোখরাজ।
হত্যাশিল্প
আরামাইক ধ্বনি
যিশুর হাড়গোড়
ঝুলছে ম্যাপেল গাছে।
প্ল্যানচেট
বাদাম খোলের মধ্যে
প্ল্যানচেট করছে
নেশাড়ু আকাশ।
দোহার
বৃষ্টি বাজছে
সিন্দবাদের ডুবো চোখ
দোহারের মতো।
বিষাদ
রাত্রির বুকে
কোথাও বিষাদ এঁকে
ঘুমোচ্ছে ঘোড়াটি।
স্নিগ্ধতা
কচুরিপানাগুলো
সরিয়ে নিলে
ভেসে ওঠে দেশ।
কাতকার
মোরগের পায়ে বাঁধা
ছুরিতে আমি
সেই আহত চুম্বক।
পয়ার
অশ্রু পয়ারে
বেঁধেছি সন্ধ্যার
দীর্ঘ শূন্যতা।
ফেরোমোন
দেহের ফেরোমোন
চুষে খাচ্ছে
রক্তবীজ।
জানলা
পোশাকহীন
মৃত জানলা দ্যাখে
গৃহস্থের হিংসা।
ধাতুক্ষয়
লবণ ক্ষরিত ধাতু
কুয়োর ধারে
পড়ে থাকা স্মৃতিভ্রম।
করোটি
করোটির ভাঁজ
খুলে খুলে কবিতা
লিখছে জলদর্চি মেঘ।
যুদ্ধ
যুদ্ধ মোমবাতি
পায়রার মতো
শান্তিপ্রিয়!
টোপর
শোলার টোপর পরে
হেঁটে যায় বেনেবউ
রোদের ঝিলিক।
ক্ষত
বিগ্রহের মতোই
মৃত্যুদৃশ্যের
নিবিড় ক্ষত।
ঘ্রাণ
স্টবেরি কন্ডোমের
সুঘ্রাণ ভিন্ন কোনো
গ্রামের পাশে দাঁড় করায়।
উড়োপোকা
পোকাদের উইন্ডমিলে
ঘূর্ণি জ্যোৎস্নায়
ঈশ্বরের হাত উঠে আসে।
গালিব
মির্জা গালিবে
ডুবে যাচ্ছে তারাখসা
পাখিদের ঠোঁট।
সিঁড়ি
সিঁড়িঘরের পাশে
সূচের মতো
দুঃখ পড়ে আছে।
কেদারা
সৌর কেদারা
নোম্যান্সল্যান্ডে
শুকোচ্ছে চুল।
চিঠি
ভেজা ডাকঘর
চিঠির রেখা
অস্পষ্ট ইশারা।

সৌরভ দত্ত
সৌরভ দত্ত। জন্ম: ১৪/১২/১৯৮৭। গ্রাম: মধ্য মাজু, হাওড়া। সম্পাদিত পত্রিকা ‘কবিতা তোমাকে’। শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্নাতক সাম্মানিক বাংলা, অষ্টম শ্রেণিতে পাঠরত অবস্থায় স্কুল ম্যাগাজিন ‘সবুজ পত্র’-এ প্রথম কবিতা বেরোয়। শৈশবের বেশিরভাগ সময় কেটেছে মামাবাড়ি ও ভাড়াবাড়িতে গাছগাছালি বেষ্টিত স্নিগ্ধ সবুজাভ প্রকৃতির মাঝে। সেখান থেকেই একটা আলাদা জীবনদর্শন সঞ্চিত হয়েছে। স্কুলজীবন থেকেই সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়া বাম ছাত্র রাজনীতির সাথে।