কবিতা

সৌভিক গুহসরকার
ফরিদপুর, বিক্রমপুর
১
ফরিদপুরের আকাশে
খাঁ-খাঁ হাওয়ার দুপুর উড়ে আসে
পুকুরের ধারে তালগাছ
চিল এসে ঝাঁপিয়ে নিয়ে যায় কাতল মাছ
দুই বালিকা মাঠ পেরিয়ে দিচ্ছে দৌড়, দূরে
নদী গেছে খেতের ভেতর ঘুরে
বাংলার আলোছায়া দেবীপক্ষে ঢাক
চিলের পেছনে ওড়ে ছাতারের ঝাঁক
বালিকারা তখনও জানে না, হয়ে গেছে শেষ
তাদের ছোটার মাঠ, চিল আর মাছেদের দেশ
২
গল্প শুনে জল চিনেছি, দেশ চিনেছি মাঠ
চিনেছি গ্ৰাম সেন-পুকুরের ঘাট
এক বালিকা রাত্রিবেলা উঠোন পেরোয়, ছোটে
ভূতের মতো তেঁতুলতলায় শেয়াল ডেকে ওঠে
হিম নেমেছে দূরে
গল্পে-চেনা মাতামহীর সাধের ফরিদপুরে
৩
ঢাকা বিক্রমপুরে সোনারং গ্ৰামের পুকুরে
ভেসেছিল চাকরের লাশ
চারপাশে কিছু হাঁস
ঠোঁটের আঘাত করে বুঝে নিতে চেয়েছিল
জীবিত না মৃত?
কাটামুণ্ডু শিখেছে সাঁতার অবশেষে?
না হলে রক্তজলে কীভাবে রয়েছে ভেসে?
জানলা দিয়ে ঠোঁট কামড়ে প্রৌঢ়া তাকায়
চোখের সামনে দেশ শেষ হয়ে যায়
৪
ছোরা খেলা শিখেছেন বালিকার মা, লাঠিখেলা
রুদ্ধশ্বাস রোমহর্ষক মেয়েবেলা
শিরায় শিরায় দেশমাতৃকা, স্বদেশগীতি
মুকুন্দদাস ও অনুশীলন সমিতি
স্বামী গান্ধীবাদী, বাপুজির পাশে
নোয়াখালির ঘাসে
দেশ স্বাধীন হবে, স্বপ্ন কত
ফুলের মতো
সংসার তুচ্ছ, দেশ আগে
সব সাধনা নষ্ট হল অবিশ্বাস্য দেশভাগে
৫
সাতপুরুষের ভিটে ছেড়ে যাচ্ছ, সঙ্গে কী নেবে―
পেয়েছ ভেবে?
সমস্ত যেখানে ছড়িয়ে আছে পাতায় পাতায়
সেখান থেকে আর কী নেওয়া যায়?
দরকারি কোনটা? অদরকারি?
গাছে বেগুন― আজ রাতে বেগুনের তরকারি―
গোরুটাকে কী বলে যাব? তালগাছগুলোকে?
শ্যাম রায়ের মন্দিরের ধুলোকে?
জন্মপত্র, পরিচয়পত্র নিয়েছ? আমরা কারা?
গাড়োয়ান দিচ্ছে তাড়া
দুটো ট্রাঙ্ক শুধু, রইল সমস্ত আলমারি
জামাকাপড়, কতরকমের শাড়ি
গয়না লুকিয়ে নাও, ডাকাতি হতে পারে রাতে―
আর আমাদের তুলসীতলা― ওকে তুলে দিয়ে যাব কার হাতে?