কবিতা
শোভন মণ্ডল
কাঁটাতার
আবহাওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই
ফুল তার নিজগুণে জড়িয়ে নিচ্ছে রং
ভাঙনের পাড়ে খেলা করে কয়েকটা পানকৌড়ি
তাদের নিঝুম চোখে রাতের শিশির লেগে আছে
যে-পথে নেমে এসেছে অন্ধকারের ঝালর
যে-দিকে নোনতা আলপথে থেমে থাকে আবাদ
তার গোপন সাকিন আজও অজানা অচেনা
কাঁটাতার পেরোতে গিয়ে ভাবি
সবুজ শ্যাওলায় ঢাকা টলটলে পুকুরের বুকে কীসের উচ্ছ্বাস?
পানিফলের গায়ে লেগে আছে যে-জল তার কি কোনো নিজস্ব ধর্ম আছে?
অন্য প্রেম
পশুর সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি পাহাড়ের চূড়ায়
মাথার সামনে এই দ্যাখো সুউচ্চ খড়্গ
অহংকারে নাড়িয়ে নিচ্ছি নিরেট মাথা
চোখের ভেতর জ্বলে উঠছে বীভৎস আগুনের লেলিহান শিখা
ধুমসো কালো শরীর থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে অসভ্যতার অন্ধকার
গর্জন করছি, যাকে বলে পশুনাদ
তুমি কি শুনতে পারছ সেইসব শব্দ?
অনুভব করছ অজানা রোমাঞ্চ?
তুমি তো জেনে গেছ
কীভাবে বুক পেতে নিতে হয় প্রেমের হিংস্রতা
অরণ্যের দিন
এভাবে বিষণ্ণ থেকো না
পাতা ঝরে যায়
বেলা শেষ হলে অরণ্যের মুখ কালো হয়ে আসে
সবই তো দৈবাৎ হারিয়ে যাওয়া ফসলের গান
আজও ডেকে যায়
ফুল ফোটে পুরোনো গাছে
অগোচরে থেকে যায় ছায়ার দাগ
শুধু এই দ্যাখো, বিশুদ্ধ বনভোজনের মাঝে আমরা পাত পেড়ে বসে আছি
বিষণ্ণ থেকো না
দু-দণ্ড ভালোবাসা বেড়ে দিয়ো
কথা নয়
আমার কথার কোনো মায়া নেই
অগোচরে থেকে যায় গভীর নীরবতাগুলো
আজও অ্যান্টাসিডের মতো গিলে খাই তীব্র শিখা
তফাতে পড়ে থাকে আমারই অবচেতন
ঘোরানো সিঁড়ির বাঁকে জড়িয়ে যায় জিভ
নিভে যাওয়া বাতিগুলো হঠাৎ জেগে ওঠে
কচলানো পাতিলেবু হয়ে কেবলই গোপন আস্বাদ
বাকি তো বলেইছি, অবচেতন… অবচেতন…
আমার কথার কোনো মায়া নেই
শুধু মন্দিরে দাঁড়ালে, আনমনে দাঁড়ালে
কথা নয়, মুখ দিয়ে মন্ত্র নির্গত হয়…

শোভন মণ্ডল
জন্ম তারিখ- ২৫/১০/১৯৮০। বাসস্থান- গড়িয়া, কোলকাতা। পেশা- পশ্চিমবঙ্গ অর্থ দপ্তরের রাজস্ব বিভাগের ডেপুটি কমিশনার (WBCS)। প্রকাশিত বই- চুম্বনে অচেনা ভাস্কর্য (পাঠক), দরজার ওপারে..(ধানসিড়ি), লাস্ট বেঞ্চ পাশে জানালা (ই-বুক, শুধু বিঘে দুই)।