লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

শুভাগত রায়

জীবন

আলপথে শুয়ে আছি। গভীর রাত এখন, কানের পাশে চিরবিরহের উপকথা শোনায় ধানগাছ। প্রসূতি ধানের বুক থেকে ওঠে মায়ের গন্ধ, ইঁদুর এসে ধান কাটে, কাটে এই মাটির শরীর। অনন্ত অপেক্ষায় শুয়ে আছি, মাটি ভিজে যাবে জলে।

প্রার্থনা

বুড়ো অশ্বত্থের গহ্বরে ঘুমিয়ে আছেন পির। অশ্বত্থের গায়ে দোলে কত জন্মের কাঙ্ক্ষিত ইচ্ছেরা। আলো পড়ে এলে, মিলিয়ে আসে মাঘরিবের সুর, একলা দরবেশ চিরাগ জ্বালান দরগায়। আরও কত বছর কাটে দেখা হওয়া-না-হওয়ায়, অন্ধকার এক মানুষ চোখের জলে ভেসে যায়, বার বার মাথা রাখে নির্জন দরগায়।

প্রেম

সহস্র বছর ধরে একাকিনী বয় তরুণী নদী। গর্ভে সময়ের যন্ত্রণা নিয়ে মনে মনে একা ক্ষয় হয়, পাথরে মাথা ঠুকে কাঁদে। অগ্রহায়ণের চাঁদ ঢলে গেলে শেষ রাতে, বয়ে আসে মাটির দিকে। ঝুরো মাটি ভিজে যায় জলে। দূরে কোথাও নিভে যাচ্ছে কোমল সব দুঃখরা।

বিষাদ

আলপথ ধরে এখনও তোমার পায়ের ছাপ। ফুলগাছের নীচে ঘুমিয়ে ভ্রমরের মৃতদেহ। তোমার অতল জলের চোখ,বুকের ভেতর প্রেমিকের মুখ, এইসব আগলে রাখে হেমন্ত শেষের হাওয়া, সান্দ্র সন্ধ্যের প্রহর।
আর হেমন্ত শেষের হাওয়ায় ঝরা পাতাকে জেনেছি প্রেম, জেনেছি, সুগভীর দুঃখছাপ।

শূন্যতা

উঠোন পেরিয়ে পা রাখলেই পা ভিজে যাচ্ছে মেঘে,
নিমফুলের গন্ধমাখা দুপুর একা বসে হেমন্তের হিসেব গোটাচ্ছে। টিনের জাহাজভরতি ফসল ডুবে গেছে পদ্মদহের জলে, শেষ অঘ্রানের হাওয়া ছুঁয়ে দিয়ে গেল কিশোরী শিউলি ফুলের বুক,
ভোরে মাটি জুড়ে ঝরে আছে তাঁর কোমল লজ্জার দেহ।
মেঘেদের গায়ে এক অলীক শূন্যতা,
যেন প্রেমিকার শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার বিকেলবেলা।
বেনেবউ পাখিদের মতো রোদ উড়ে গেছে দূরে তোমার শহরের দিকে।

 

Facebook Comments

পছন্দের বই