লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়

জলরঙের ছবি


জলের কাছে এসে খুলে রাখছ সাবালক বয়স। উঠানে খোঁপা খোলা রোদ। পুরানো ক্যালেন্ডারের পাতায় ঘুড়ি আঁকতে গিয়ে দেখলে— দূরে সাইকেল ঠেলে হেঁটে যাচ্ছে কেউ। হঠাৎই মনে পড়ল— বাতিল টায়ারের সাথে তোমারও কিছু কথা ছিল। অথচ কিছুতেই মনে করতে পারছ না— শেষ কবে দেখেছিলে, এঁটোলাগা অ্যালুমিনিয়ামের বাসন কীভাবে একা পড়ে আছে।

এখন তুমি নদী আঁকবে। পাথরের চাতালে পুয়ালদড়ির মতো পড়ে থাকবে একটা ঢ্যামনা সাপ। দূরে দূরে কিছু গাছপালার দৃশ্য। মাছের কাঁটার মতো বাতিল অ্যান্টেনা জড়িয়ে শুয়ে থাকবে অনেক পুরানো একটা হলুদ বাড়ি।

তুমি জল ঢেলেই যাচ্ছ। কিছুতেই রং উঠছে না।


সম্পর্ক থেকে উড়ে যাচ্ছে পরপুরুষ বক। পুকুরের চরিত্র নিয়ে কথা উঠতেই অনেক দূর জল গড়ালো। মেঘের পাশে মেঘ এল। নিরাপত্তা নিয়ে কেউই তেমন ভাবিনি। হাতে হলুদ সুতো বেঁধে বিশ্বাস করেছিলাম— উচ্ছেদের পর আমাদের আশ্রয় হবে শামুকবাড়ি।

এই ছবিতে কোনো রং নেই। তবু জলের বিরহ নিয়ে আমরা অনেকদূর যাব।


পুরানো তানপুরা থেকে সন্ধ্যা উঠে এল। গতজন্মের ভুলভ্রান্তির পাশ দিয়ে খালি-পায়ে হেঁটে ফিরছে কয়েকটা ছায়া। শ্যাওলাপড়া কুয়োর চাতালে দীর্ঘদিন পায়ের ছাপ নেই। শুকনো লঙ্কার মতো গুঁড়িয়ে যাচ্ছে অন্ধকার। জেগে উঠছে সামবেদ। কয়েকটা হোঁচট খাওয়া সরগম।

নিভে যাওয়া হ্যারিকেনের রং দিয়ে বিষাদ আঁকছ তুমি। ক্লান্তি থেকে ক্যানভাসের পাশে ঘুমিয়ে পড়েছে অন্ধকার।

ছবিকে ছিঁড়ে খাচ্ছে ছবি।

সান্ধ্য

মালা চন্দনের দিকে ঝুঁকে আছে সন্ধ্যার রেওয়াজ। এ-সংগীতে পিতার জন্মটুকু অবৈধ। পুরানো কাঁসার বাসন থেকে বাল্যপ্রেমের দাগ তুলতে তুলতে, গোপালের সান্ধ্যভোগ নুনে পুড়িয়ে ফেলেছে মা। আয়োজনহীন অন্ধকার। হাতবদল হয়ে আসা কুয়োর পাশে বৈচিত্র্যহীন বালিকার মুখ। সংগম ফেলে উড়ে গেছে খয়েরি চড়ুই। এসব কথা লেখা নেই কোথাও। তবু পাথরের ঘণ্টা বাজছে দূরে।

তৃষ্ণা নেই। অথচ নামগানের আড়ালে এসে দাঁড়িয়েছে উদাসীন। পোড়া সলতের গন্ধ গায়ে মেখে, রক্তশূন্য বাতাসার পাশে শুয়ে আছে ঐহিক পাপ।

বৈকালিক

বাদাম খেতের পাহারায় অসতর্ক ঘুমিয়ে পড়েছে অনার্যবালিকা। লাল শালুকের ডাঁটার মতো দু-পায়ের নীচে সরু হয়ে আসছে রোদের শেকল। উলটো পালটা হাওয়া দিচ্ছে। ধুলো উড়ছে। এ-জন্মের পাতা উড়ে যাচ্ছে ও-জন্মের দিকে। ঘুমের ভেতর যেন তার কষ্ট হচ্ছে খুব। যেন পিতলের নাভিতে বেজে উঠছে রাক্ষসবাদ্য।

কেউ কাউকে দেখছে না। সংকটকালীন একটা খরগোশ পালিয়ে যাচ্ছে প্রথম ঋতুর দিকে।

Facebook Comments

পছন্দের বই