লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

তৃণা চক্রবর্তী

পাখিদের বাড়ি

অদ্ভুত সময়
দূরের ছাদ থেকে পাশের ছাদ দেখি
রোদ এসে ভেঙে পড়ে ঘরের ভেতর অবধি
পাখির ডাকের মতো জীবন পেয়েছি কিনা জানতে চায়

কী থেকে কী হয়
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই

ব্রিজ ভেঙে পড়ে কোথাও

যেখানে গিয়ে দাঁড়ালে

যেখানে গিয়ে দাঁড়ালে স্পষ্ট শোনা যাবে
হাওয়ার অভিমুখে হারিয়ে ফেলা কথা
কীভাবে পৌঁছোব সেখানে?

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হতে পারে অনেক উপরে
নেমে যেতে হতে পারে জলের ভিতর
পুরোনো কেল্লার ভাঙা ধ্বংসস্তূপে কোথাও
কোথাও একটা যেতে হবেই

হারিয়ে ফেলা শব্দ, ফিরে পাওয়া যাবে আবার
যেখানে গিয়ে দাঁড়ালে এরকম একটা বিশ্বাস হয়
কীভাবে পৌঁছোব সেখানে?

বাতিল

দুঃখ পুরোনো হলে, কথাগুলো হাওয়ার
শব্দহীন কুয়াশার রাস্তায় যাতায়াতের মতো
বাতিল হয়ে যাওয়া কোনো প্রতিবাদ
ভুল দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা গান

পুরোনো দুঃখ নির্জন কুয়োর মতো বোবা
তার কাছে যাও, ডাকো
পাহাড়ে নিয়ে যাবে বলো
সে বিশ্বাস করবে না

পুরোনো দুঃখের শিকড় মাটির অনেক নিচ অবধি
যেন আরেকটা গাছ
ডালপালা সব পাথরের
সেখানে থেমে আছে শীতের নিয়ম

শুধু নতুন কোনো পাতা নেই, ঝরে যাওয়ার মতো
দুঃখ পুরোনো হলে তাকে ভালোবেসো
নতুন জামা কিনে দিয়ো শেষ বারের মতো

প্রেমের কবিতার পাশে

আমি তো এভাবেই দেখি
দূরে, বাস রাস্তার থেকেও দূরে
সমুদ্রের আওয়াজ থেকে দূরে
প্রেমের কবিতার পাশে ঘুমিয়ে পড়েছে
মাঝখানের অনেকগুলো বছর

পুরোনো স্বপ্নগুলো উড়ে যায়
নভেম্বর থেকে, ডিসেম্বর থেকে
যত দূরে পারে, উড়ে যায়
হাতছানির থেকে, সমর্পণের থেকে
সোজাসুজি দিনের থেকে
ভূতে পাওয়া রাত্রির থেকে
দরজা ঠেলে চলে যায়
সন্ধ্যে রঙের ছাদে

যেখানে অনেকগুলো সরলরেখা
যেখানে পুরনো কবিতার পাশে ঘুমিয়ে আছে
সামান্য বয়স বেড়ে যাওয়া সেতার
তার এলোমেলো সুর ছিঁড়ে ফেলতে চাইছে রাত্রি

একা

সতেরো বছর আগের অভিমান
অচেনা স্টেশন দেখবে বলে
ট্রেনে উঠে বসেছে একা

তারপর সারাটা পথ একা
জঙ্গল সরে যায়, ব্রিজের নিচ থেকে নদী
টিলার ওপর থেকে গড়িয়ে পড়ে পাথর

সতেরো বছর আগের পাথর
কুড়ি বছর আগের পাথর
তিন বছর আগের…

গড়িয়ে পড়তে থাকে একের পর এক
তার নীচে চাপা পড়ে যায় কথা
গুহার ভেতর ঢুকে হাহাকার করে

গুম মেরে যায় কীরকম
অচেনা স্টেশন দেখবে বলে
ট্রেন থেকে নেমে যায় একা

 

Facebook Comments

পছন্দের বই