লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

যশোধরা রায়চৌধুরী

প্রেম আর মৃত্যুকে নিয়ে কিছু কথা

মৃত্যুর সঙ্গে প্রেমের একটা কীরকম যেন সম্পর্ক আছে।

মৃত্যুর কাছাকাছি যাওয়ার অনুভূতি,
অনুক্ষণ শ্বাসরোধ হয়ে আসা আলোর কথা, ভাবতে ভাবতে
তলিয়ে যাওয়া প্রেমের মধ্যে
এই তো চেয়েছিল আরিস্তোত্‌ল থেকে অলোকরঞ্জন
অথবা রাসেল থেকে রবিশংকর…
বলো চায়নি?

শিক্ষিত মানুষের আর যা যা চাওয়া থাকে
তার গভীরতা
শ্যাম্পুর পর মাথায় খুশকি আছে কিনা আঙুলে খুজলি করে
দেখে নেওয়ার মতো।

মৃত্যুর কাছাকাছি যাওয়ার ক্ষমতা
অশিক্ষিত মানুষের আছে
গাছ থেকে পিছলে পড়ে যাওয়ার সময়ে
রাতঘুমে বোবায় পাওয়ার সময়ে
হাঁচবার সময়ে।

হাঁচতে যে-সুখ
মুহূর্তের এক শতাংশের জন্য যে-মৃত্যু
হৃদযন্ত্রের বন্ধ হয়ে যাওয়ার যে-মওকা
সর্ব অঙ্গের ক্রিয়াপ্রক্রিয়া থেমে যাওয়া সমেত

সেইসবের একশোগুণ বেদনা
প্রেমের ক্ষেত্রেও অর্জিত হলে
পৃথিবীর প্রতিটি প্রেমিক… চণ্ডীদাস থেকে জয়দেব
মিশেল ফুকো থেকে নীরদবরণ…
সবাই ধন্যি ধন্যি করত…।

বাকি যা কবিতা ও কথা ও দর্শন রচনা প্রেমকে নিয়ে, তা মিথ্যাচরণ।

তবে ৯৯% ক্ষেত্রে প্রেম থাকে না বলেই
এসব দরকার পড়ে আমাদের।


মৃত্যুর সঙ্গে প্রেমের একটা কীরকম সম্পর্ক আছে।
প্রেমের চূড়ান্ত অবস্থায় আমরা মরে যাওয়ার কথা বলি।
আমরা মরার মতো কষ্ট পাই, প্রেম চলে গেলেও, আবার।
তাহলে এই দু-রকম মরার মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে।
তবে ভয়, যেটা প্রতিপদে আমাদের ভেতরে কাজ করছে,
নিজেকে সম্পূর্ণ হারানোর কষ্ট
আর সব হারিয়ে ফেলার দুঃখ আর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাওয়া,
আর শরতের মেঘের মতো উবে যেতে থাকার
বেদনা… সব মিলিয়ে,
আমার এখন মৃত্যুকেই বেশি বেশি প্রেমের মতো লাগছে।

কবিতার নাম শিল্প

আমি তো ভাষা পারি ভাষার আলো পারি আলোর চেয়ে পারি অন্ধকার
কিছু তো পাড়ি দেওয়া অথবা থেমে গিয়ে শ্রবণ সরু গান স্তব্ধতার

পাড়িতে আছে ভয় হয়তো পরাজয় হয়ত টানা গান ফুৎকারের
তবু তো চাক্ষুষ করেছি মন্দকে টেনেছি জিভখানি চিৎকারের

এখনও দম আছে এখনও ঘাম ঝরে তুমুল কষ্টেও হাসিই পায়
এখনও শ্রম করে অনুক্রম ধরে পেছনে চলে গেলে বাঁশি ফেরায়

ফের হে বালকেরা ফের হে বালিকারা হও হে কষ্টেই দৃষ্টিবান
যদি ভাষায় থাকো ভালোবাসায় থাকো নিজের শিল্পেতে দাও হে শান!

Facebook Comments

পছন্দের বই