উন্মাদের দিনলিপি
১
শীতঘুমের ভেতর জোর করে ঢুকে যাচ্ছে বিষণ্ণ সানাই। আবহে কেউ কোথাও নেই। জলে ভিজে যাওয়া কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস— হাতড়ে হাতড়ে তুলে আনছে মৃত নদীটির যোনিরোম। এ সবই চিত্রকল্প। বালিহাঁসদের পালক দিয়ে তুমিও নিশানা করেছ দিগন্তের রং।
শোক জানো। সন্তাপ জানো। জানো না শুধু— শ্মশান বানানে কেন যুক্তাক্ষর বসে।
২
বাসনাবৃক্ষ জানে— কতদূর ছড়ানো এই মায়া। আঙুল থেকে শব্দ খুলে খুলে প্রিয় হয় স্মৃতি। ফেলে যাওয়া মাটির একতারায় শরীর বেজে ওঠে ঝলমল। অনেক পুরানো নামগান থেকে খুলে যায় জং ধরা জন্মের গুহামুখ। পাথরে পাথরে রক্তের দাগ। মনে হয় এইসব নদীর দিকে কীভাবে ফেলে এসেছি জন্মঋণ।
বিন্দুমাত্র হাওয়ায়— কেঁপে ওঠে এক একটি ভারহীন পাতা।
৩
লেখার বাইরে থেকে গেল যেসব দৃশ্য শব্দ ছবি— তাদের কবিতা না হওয়াটাই অমোঘ। অন্ধ পুকুর, আঁশটে ডোবার গন্ধ কিম্বা ছিপছিপে কোমরের আঁশবঠি— এইসব চিত্রকল্পের বিপরীতে ঝিমধরা ছাতিমের হাওয়া ওঠে। সমস্ত শুভাশুভের বাইরে, তোমার পালিত নখে জোৎস্না এসে বসে বসে রসুন ছাড়ায়।
আমলকি বনের ছায়া— আমার আর লেখা হয়ে ওঠে না কিছুতেই।
৪
পুরানো হিন্দিগানের ভেতর সন্ধা নেমে আসে। দৃশ্যের পর দৃশ্য গোটাতে গোটাতে আয়েসে হাই তোলে বৈষ্ণব পুকুর। জলতলে কেউ নেই। শুধু এক বিধবা বক ঘাসের শরীর থেকে রং তুলে রাখে। মাছেদের ভিটেমাটি লবণাক্ত হলে— দরপত্রে ফুটে ওঠে নক্ষত্রের ছাপ। বধির জন্মান্তর আগলে আছি একা। এরপর শুধুই শাঁখ শুনব বলে।
তোমার চোখের রং দেখে— আমিও সন্ধ্যা চিনেছি অকস্মাৎ।
৫
আপাত জরুরী হোক জোনাকির জ্বলে ওঠা। ঘুমের ভেতর ঘুঙুর হারিয়ে ফেলেছে অনার্য যুবতী। মানচিত্রে কিছুতেই স্পষ্ট নয় অবস্থান।
শুধু আলতার দাগ। সেরে ওঠা ক্ষতের পাশে অভিমান সামান্য এক স্মৃতি।
দিগন্ত পেরোতে পেরোতে, নাম ধরে ডেকে নাও— হে উন্মাদ।
6 replies on “সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা”
ভালো লাগল
পাগল করে দেওয়া লেখা সব
কী বলব! কোন বিশেষণই পর্যাপ্ত হবে না। মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
অপূর্ব
আগে তেমন পড়িনি কবিকে। এবার থেকে পড়ব।
এরকম চালাকিবিহীন স্বচ্ছ উচ্চারণ বহুদিন মনে থাকবে।
কে আপনি?
কি লিখছেন জানেন?
কম লিখুন।
কম প্রকাশ করুন।
কবিতা নয় এ এক অতীন্দ্রিয় অনির্বচনীয় ব্যোম।
কবিতা লেখার নিয়ম নিক্তি ওজন করার কোনো দায় নেই আপনার
আদিতে ছিল না ঋক বেদের সময় থেকে তা অটো জেনারেটেড হয়
লেখা নয় শব্দ নয় দৃশ্যকল্প নয়। আপনি যা পাচ্ছেন তা হাওয়া থেকে – মেহনত চালাকি স্টান্টবাজি দিয়ে হয় না
যা পাচ্ছেন তা ভারহীন ভয়ডরহীন শিশু যেমন এমনি এমনি হাসে তেমন তেমন ছেড়ে দিন
যশ প্রতিষ্ঠা প্রশংসা খ্যাতি আপনার অন্তর্গত আপনাকে খুন করে দেবে।
আমি আপনার শত্রু ভাবুন।
কথাগুলো এল লিখে ফেললাম। সচরাচর মন্তব্য জাজমেন্ট ভালো মন্দ আমি করি না।
গেলাম।
খেস্তান কি চুমু খান আমার কিছু যায় আসে না
আরও ছোটো ছোটো শব্দচলাচল নেকেডলি ছেড়ে দিন
আরও সংক্ষিপ্ত দু তিন কি ১ লাইনে হোক না হোক কিছু কবিতার নতুন সজ্ঞা তৈরি হোক