লেখক নয় , লেখাই মূলধন

ঈশানী বসাকের গদ্য

শালুক

বহুদিন হল অপেক্ষা করছি। কেউ জিজ্ঞাসা করেন, কেমন আছেন। কেউ বা বলে, ভালো থাক, কবিতায় বাঁচ। রিলকের চিঠির ফাঁকে ফাঁকে জানতে পারছিলাম যে ফুরিয়ে যাওয়া হারানোর থেকে ভারি সোজা। নির্লিপ্ত যেসব বাড়িগুলো পরপর দাঁড়িয়ে তাদের এইসময় বলি চলে যেতে।গাছ আর ঘর খুব নির্লজ্জ। আমাদের সমস্ত শরীর ঢেকে রাখে। অন্নের সংস্থান করে যারা তারা যৌনতার ভরপাইও সেরে নেয়। সেদিন নরম একটা মুঠোর মধ্যে দেখি তুমি ধরে আছ আমাকে। কোনো স্বীকারোক্তি আদায় করব না বলেই আমি সেই মুঠোর নাম বাবা রাখলাম। যে লোকটা স্টেক খেতে খেতে রেস্তোরার ওয়েটারকে তাড়া দিচ্ছে একটা বিয়ারের জন্য সে ভুলে গেছে দেখা হওয়ার আগে অপেক্ষাটা বড়ো বেশি স্বাস্থ্যকর। ওই যে দূরে চিমনির থেকে অনর্গল ধোঁয়া বেরিয়ে যাচ্ছে উপরে তার জন্য কতবার আকাশ দেখছি আমি। আসলে রাজহাঁসের গায়ে কাদা না লাগার বিশ্বাস থেকেই ক্রমশ আমরা বারবার এভাবে আকাশের দিকে তাকাই। এইভাবে রোজ বিষণ্ণ ঝিমোনো সন্ধ্যের বিজ্ঞাপন থেকে মুক্তি দিয়ে নিজেকে, আজ বেশ কয়েকটা ইতিহাস ঘাঁটলাম। যে সিনেমার টিকিট কাটলাম সেটা শুরু হতে দেড়ঘন্টা তাই হাঁটতে শুরু করলাম। দেখলাম একটি মেয়ে ভারি খুশি হয়ে রুমাল নাড়াতে নাড়াতে এগোতে গিয়ে হোঁচট খেলো। একটি ছেলে তাকে ধরল। আর তারপর মেয়েটা আমার দিকে ফিরে এল কিন্তু দেখল না আমাকে। ছেলেটা একভাবে আবার নিজের ফোনে মন দিল। এইসব কিছু না ঘটার দিনগুলোতেই আমি জানি তুমি তোমার বিছানাতে বসে পাগলের মতো ঘটনা খোঁজো। একটা গল্প চেয়েছে যারা তারা ভুলে গেছে যে বেঁচে থাকার জন্য জ্বলতে হয়। তুমি বলো, নাহ্ তোকে ভেবে পারব না তাই কাগজটাকেই পুড়িয়ে দিলাম। দপ দপ করে যে আওয়াজটা পাচ্ছি তোমার বুকের মধ্যে সেখানে কে যেন বারবার বলে চলে যাবার রং শালুকফুলের মতো হয়। এই টেবিলটায় আমার সামনে বোতলটা ওই রঙের হয়ে যাচ্ছে। আমি জানি পুরো শরীরটা ঢেকে ফেলার আগে আমাকে বাড়িটা শেষবার সাবধান করে বলবে আর লিখো না। নির্লিপ্ত হও। সেসব ফুৎকার দিয়ে ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকেরা ঘুরে তাকাবে না। কে যেন তবু বলবে ঠিক কোন রংটা আপনার পছন্দ ম্যাডাম। শালুক রং, শালুক রং।

Facebook Comments

পছন্দের বই