লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

অনুপম মুখোপাধ্যায়

কমেডি অপেরা

এক কমেডি থেকে আরেক কমেডি অবধি আমাদের
চাওয়া পাওয়া

যেমন অদ্ভুত শৃঙ্খলায় বাঁধা থাকে গরম হাওয়া
আর বৃক্ষের আপনজন শুকনো পাতাগুলো

আমরা পাহাড়ে গিয়ে দেখছি
সেখানে মনের মতো শীত নেই

আমরা সমুদ্রে গিয়ে দেখছি
যথেষ্ট জল পাওয়া যায় না

তোমার গলায় সেদিন শুনতে পেলাম
অবিকল আমারই আওয়াজ

আমাদের মধ্যকার বাতাসকে ভেঙে
ডিগবাজি খাচ্ছে কিছু গম্ভীর ক্লাউন

ভ্রমণ

জলের কিনারায় স্বচ্ছ হয়ে আছে বরফ
তাহলে আমরা সম্পর্কের কঠিনতার কথা বলি

যে কবিতায় চোখের জল থাকে
সেই কবিতাই স্পষ্ট পড়া যায়

বেড়াতে যাওয়ার চেয়েও বেড়াতে যাওয়া নিয়ে
কথা বলতে বেশি ভাল লাগে

অশ্রুপারের কুয়াশা নিয়ে যা বলবে
কবিতার মতোই শোনাবে

ভৌতিক

ভূত কখনো পরিষ্কার ঘর পছন্দ করে না
ভূত চায় বিছানায় তোমার পা ঠান্ডাই থাক

বাতাস যতটা নিঃসঙ্গ হয় জীবন তার চেয়ে
অনেক বেশি ফাঁকা হতে পারে

রক্ত পরীক্ষা করিয়ে ফেরার পথে
তুমি একটা টিভি কিনে আনলে

ধপধপে সাদা একটা ঘরে উলঙ্গ এক মহিলা
চামচে ঢেলে কাফ সিরাপ খাচ্ছেন

টকটকে লাল কাফ সিরাপ

যেমন মৃত্যু নিয়ে ভাবতে ভাবতে কোনো লেখক
জীবন নিয়ে উপন্যাস লেখেন

জলের জাহাজ

ঘুমের মধ্যে বৃষ্টি হল তুমি জানতে পারলে না
একটা বিকেল তুমি এভাবেই কাটিয়ে দিলে

অথচ জলের জাহাজ তোমার ঘুমের মধ্যে ঢুকেছিল

স্বচ্ছ জাহাজভর্তি লবণাক্ত জল
চোখ আর মেঘের মধ্যে আকার নিচ্ছিল

রক্তে মিশে আছে নৌচালনা বিষয়ক সতর্কতা
রক্তে মিশে আছে জাহাজডুবির রাসায়নিক ধারণা

সমুদ্রকে এভাবে মোটেই হারানো যায় না

তোমার প্রিয় পুরুষকে তুমি কাগজের মতো
ভাঁজ করে রেখেছ

তার লাল টালির বাড়ি থেমে যাওয়া বৃষ্টিতে
কমলালেবুর খোসার মতো তেতো হয়ে আছে

মেঘের নীচের পৃথিবী

পথকে শক্ত করে ধরে রাখো যেন হারিয়ে না যায়
পাখিরাও ওড়ে কারণ তারা আকাশ ছাড়া বাঁচতে চায়

কালো মেঘের তলায় জলজমা ক্ষেতগুলো চকচক করছে

জল দিয়ে ঘেরা পৃথিবীতেই তোমাকে একটা
জীবন কাটাতে হবে

জল ভেঙে উঠে আসছে জন্মের আগের শূন্যতা
জল ভেঙে কেটে যাচ্ছে জন্মের পরের ফাঁকা স্বভাব

দিগন্ত থেকে হুহু করে ছুটে আসছে দমকা জোলো হাওয়া
তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে আরো বাঁচার জন্য

Facebook Comments

পছন্দের বই