লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

অঞ্জলি দাশ

প্রেম

জানো না কোথায় ব্যথা, কালো জল কতটা ডোবায়,
স্বপ্ন নামধারী এক শবরের তীর বিদ্ধ এ হৃদয়
উথাল পাথাল হলে, তোমাদের কেন বা এতটা লাগে?
কৃষ্ণ এক নাম বৈ তো নয়,
আসলে নিষিদ্ধ গাথা লিখি আর মুছে ফেলি,
পাড়া প্রতিবেশী জানে কতবার ডুবে ডুবে
বিষ খেয়ে অমৃত বলেছি।

এ শরীর জ্বলন্ত প্রদীপ
যে কোনো মুহূর্তে তাকে শবসাধনার কাজে
নিয়ে যেতে পারে সন্তজন…
যৌথ যাপন ক্রিয়া, রতি বা আরতি সবই এক রীতি;
দাহকাজ শেষ করে যেভাবে আত্মজন দাঁতে কাটে মায়া,
যা পোড়ে তা বাহ্য সন্তাপ।
অন্তরের বহ্নি তুমি জানো, পুড়েছ তো কতবার কতজন্ম ধরে।

জলছাপ

বৃষ্টিরাত চাই যতোবার, রাত একা আসে

বিষাদের খোলাচিঠি ফেলে রেখে মেঘ উড়ে যায়

শুধু চোখ ভেজে…
রং নেই, হাহাকারও নেই, জলে লিখি আত্মকথন।

অশ্রু ভেজা
অন্ধকার আর সঘন একাকী রাত
পরষ্পর নৈকট্যের তীব্রতায় ক্ষয়ে যেতে যেতে
সামান্য বিষের ছোঁয়া নীল হয়ে লেগে থাকে
ফুরোনোর আগে।
কিছু কি ফুরোতে দাও রাত্রিচর ঘুম?
গ্লানি ও বিষাদ, প্রেমে
ঝাপসা হয়ে আসা স্পর্শ এফোঁড় অফোঁড় করে রোজ।
রঙিন তরল নামে,
প্রবচন এক ঋতু মাটিকে অদ্ভুত রাখে, মাটি বীজ নেয়;
তপ্ত শরীর, শেষবেলা অভুক্ত বৃষ্টি এসে লিপ্ত হয়।

গোটানো ডানার নীচে
ভাঙা শামুকের মতো ক্ষত ঢাকতে গিয়ে মনে পড়ে যায়,
জলছাপ অক্ষরের গায়ে জ্বর ছিল।

ক্ষত

আঘাত মানেই শিল্প, কেননা সে আয়ুষ্মন
তাকে তুমি মুছতে পারো না কিছুতেই।
বিপন্নতা নিজেকে যখনই ভাঙে,
চিড় ধরা সম্পর্কের চোরা স্রোতে গুলে যায় তুচ্ছতার রং,
যাতে কোনো ছবি হতে নেই।

দু-চোখের ব্যাপ্তি জুড়ে মেঘ আসে, রোদে পুড়ে যায়।
তোমাকে ভেজাবে বলে বৃষ্টি আসেনি কোনোদিন;
ঘরে ফেরা অশ্রুস্রোতই তোমার তৃষ্ণার কাছে ঋণী।

মুখের প্রতিটি রেখা ভেঙে পড়ছে গানের বিস্তারে,
তুমি আলাপ বোঝোনি।

মাঝপথে সুর থেমে গেলে অপ্রস্তুত স্বরলিপি, ভাঙা গান,
খোলামকুচির মতো, ব্যথা গিলে আগলে রেখেছ
যাতে মনে থাকে একদিন ভেঙেছিলে ঘর ও জলের পাত্র।

বিষাদ সঞ্চয়

কিচ্ছু ফেলিনি,
সামনে এগোলে পিছনে যে অন্ধকার
বিচ্ছেদের মতো লেগে থাকে, তার কাছে সব জমে আছে।
ভাঁটায় যাওয়ার আগে,
টুকরো টুকরো নদী স্নান জুড়ে বানানো যে জলের শরীর,
সে-ই জানে ভুলে যেতে কতটা বিষাদ লাগে,
কতটা অশ্রু দিয়ে ধুতে হয় সুখ।

দুঃখদিনের চিঠি ছিঁড়ে ফেললে কথারা যেভাবে
শুধু স্পর্শ হয়ে আঙুল জড়িয়ে রাখে,
নদী জানে সেই সুখ, মোহনা অব্দি সে-ই সঙ্গে থাকে।
তীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে তার ভিন্ন রাগ, ভিন্ন যন্ত্রনার ঘোর।
তারপর অন্য নামে, অন্য বাঁক, কেউ যাকে ভুলেও দেখে না কোনোদিন।

ভাঙা গান

গান থেকে টেনে তুলি তাকে, তার ছিঁড়ে যায়…
ভাঙা সুর ছড়িয়েছে আগুন অবধি।
চোখে জল, খিদে জাগছে খাদে;
রাত চলে গেছে তবু শরীরে শরীর নেই।

দুপুরের ঘুমে ভাত ফুটছে, সূর্য ডুবলে বেড়ে দেবে পাতে।
অতিথি সামান্য নয়, খিদের মহিমা জানে।
সন্ধেবেলা প্রতিদিন আগুন বাড়ন্ত, খিদে বাড়ে
ধুলোর মতন ওড়ে অন্নব্যাঞ্জনের সুখ…
আগুনকে সাক্ষী রেখে শরীর পোড়ায়,
প্রেক্ষাগৃহ জুড়ে আজ তারসপ্তকে হাততালি হবে।

Facebook Comments

পছন্দের বই