গদ্য সংগ্রহ

কবিতাচর্চায় রঞ্জিত সিংহ এক স্বতন্ত্র স্বরের অধিকারী। দীর্ঘ ৬৭ বছর কবিতাচর্চার সঙ্গে সঙ্গে গভীর প্রজ্ঞা, পর্যবেক্ষণ, আত্মানুসন্ধান, বাংলা ও বিশ্বসাহিত্য পাঠ, সম্পাদনার অভিজ্ঞতা, কবিতার শিকড়কে মস্তিষ্ক দিয়ে আত্মস্থ করার যে প্রক্রিয়া তিনি চালিয়ে গ্যাছেন, তারই ফলশ্রুতি হিসেবে আমরা পেয়েছি অসামান্য সব প্রবন্ধ গ্রন্থ যা বোধে, অনুভবে, মননশীলতায় আলোড়িত করতে পারে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। তারই প্রতিফলন হল এই ‘গদ্য সংগ্রহ’।

গদ্যসংগ্রহ ১

গদ্যসংগ্রহ ২

গদ্যাবধি

কবিত বিষয়ক নানা মনোজ্ঞ আলোচনা এই বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

গল্পকার

“দেবর্ষি সারগীর ‘গল্পকার’ অন্য মাত্রার উপন্যাস। কিন্তু অভিনব উপন্যাস। যে গল্প লেখে তার ব্যক্তিগত বাস্তব জীবন, তার শৈল্পিক অন্তর্জীবন, তার পরিকল্পিত ও সংগৃহীত গল্প— এই ত্রিবেণীবন্ধনের এমন এক সার্থক শিল্পরূপ এখানে প্রত্যক্ষ করা যায়, যাকে অভিনব না বলে উপায় নেই।”
— সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়

“দেবর্ষি সারগী লেখক-জীবনকে উপলব্ধি করেছেন, তার ছবিও এঁকেছেন নিখুঁতভাবে। দীর্ঘ এই উপন্যাস পড়তে পড়তে কখনও ক্লান্তিবোধ হয় না। তাঁর ভাষা এ ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করেছে। উপমার ব্যবহারেও বৈচিত্র্য লক্ষ করার মতো।”
— প্রবাসী আনন্দবাজার

“‘গল্পকার’ উপন্যাসে লেখক সাহিত্যের আধুনিকতম তত্ত্ব সমূহের খবর রাখেন এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।”
— দেশ

“অপ্রচলিত ঘরানার উপন্যাস লিখেও তিনি টেনে রাখতে পারছেন পাঠককে।”
— আজকাল

গল্পসমগ্র

মনোরঞ্জন ব্যাপারীর গল্পগুলো দলিত শ্রমজীবী পীড়িত মানুষের বহুস্বর হয়ে ধরা দেয়। ভালো করে তাঁর আত্মজীবনী পাঠ করলে বোঝা যায় আত্মজীবনীর ‘আমি’-ই বারংবার নানারূপে ফিরে আসে গল্পগুলোয়। কিন্তু এই আমি একজন নয়। মনোরঞ্জন তাঁর এক আমি-র ভিতরে ধারণ করেন প্রান্তসমাজের আরও অনেক আমি-কে, যারা আমাদের আখ্যানবৃত্তের মূলস্রোতে, সংস্কৃতির— স্মৃতির— আত্মনির্মাণের— শিকর অনুসন্ধানের পথে ‘ওরা’ হয়েই থাকে। তাদের চোখে বিশ্বদর্শনের সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয় আমাদের জাতি ও শ্রেণি বিভক্ত সমাজে, অনেক সময় তারা দেখার বিষয় হয় মূলস্রোত সাহিত্যে, কিন্তু তাদের দেখাকে আমরা দেখতে পাই না। দলিত লেখকের দেখা সুতরাং কেবল দলিত শ্রমজীবী প্রান্তিক মানুষকে দেখা নয়, তাদের চোখ দিয়ে দেখা। ব্যাপারীর ছোটোগল্পগুলি এখানে এই ছোটোলোকের দেখার বিস্তার। মনোরঞ্জন আত্মজীবনীর বাইরে বেরিয়ে গল্পগুলোয় নিজেকে এই সমাজের প্রতিনিধি করে তোলেন না, অন্যের মুখ দিয়ে বলান তাদের গল্পগুলো।

গান আমার

আত্মজীবনী নয়। অলক রায়চৌধুরী তাঁর সংগীতময় জীবনপথের খন্ডচিত্র এই বইয়ের বিভিন্ন লেখায় উদ্ভাসিত করেছেন। আলি আকবর খাঁ থেকে সুচিত্রা মিত্র, মাইহার ব্যান্ডের শিল্পী থেকে তিমিরবরণ কিংবদন্তি সেইসব ব্যক্তিত্বদের সান্নিধ্য ও বিচিত্র অভিজ্ঞতার বর্ণনা এই বইয়ের অন্যতম আকর্ষণ। কড়ি ও কোমলে গাঁথা সেইসব কথা যেন গান হয়ে বেজে ওঠে প্রতিটি অধ্যায়ে।

গোপাল ভাঁড়

সংখ্যাটিতে গোপালের অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব সবটাই যেমন দেখানো আছে, তেমন দেখানো হয়ে গল্পের নানা দিক। দুষ্প্রাপ্য ছবিসহ সংখ্যাটি ছাপানো হয়ে গোপালকে নিয়ে লেখা একমাত্র বই ‘নবদ্বীপ কাহিনী’র  সম্পূর্ণ ফ্যাকসিমিলি। এছাড়া নানা লেখা পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে।

গোপাল ভাঁড়কে নিয়ে এই প্রথম একটি সম্পূর্ণ সংখ্যা।

গ্রাম-বাংলার আঞ্চলিক শব্দ ও প্রবাদ

এই কাজটি লেখক দশ বছর ধরে করেছেন। ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন এই আঞ্চলিক ও প্রবাদ।

ঘরগিন্নি

ঘুলঘুলি

আমরা সময়ের পিছনে, আর সময় আমাদের পিছনে ছুটছে। এই গতিময়তার আমরা আপনজন; সময়-সংকুলতার বান্ধব। সাহিত্যেও এর প্রভাব প্রত্যক্ষণীয়। গল্প হয়ে উঠছে ক্ষুদ্রায়তন। এই স্বল্পায়তনের মধ্যে বৃহৎকে ভরে দেওয়াই অণুগল্পের উদ্দেশ্য। এ যেন বিন্দুতে সিন্ধু ধরার প্রচেষ্টা। টেস্ট, ওডিআই নয়— টি-টোয়েন্টি। স্বভাবতই এখানে লেখক যা লেখেন, পাঠককে বুঝে নিতে হয় তার চেয়ে অনেক বেশি।
অণুগল্পের চাহিদা এখন ক্রমবর্ধমান।‌ সেই ভাবনা থেকেই আটজন গল্পকারের পাঁচটি করে গল্প নিয়ে সেজে উঠেছে ‘ঘুলঘুলি’।

চর লবণগোলা

ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার সীমানায় নদীভাঙনে সৃষ্ট চর লবণগোলা; এক ডুবো-সূর্য সময় নাগরিকত্ব বিল নিয়ে সেখানে ধেয়ে আসে এক মারণ ঝড়। সেই ঝড়ে তোলপাড় হয় মানুষের সাবেক বেঁচেবর্তে থাকা। ব়্যাডক্লিভ লাইনের চকখড়ির দাগে রাষ্ট্র হুকুম জারি করেছে— দূর হটো; তফাত যাও। তুমি বিদেশি। তুমি অনুপ্রবেশকারী। অথচ, তারা কখনো কোথাও মাথা তুলে মানুষের সম্ভ্রম আদায় করতে চায়নি। তবু রাষ্ট্রের কাছে তারা ভয়াবহ ভাইরাস।
রাষ্ট্রবাদের সিম্বলগুলো যখন মানুষকে ছিন্নমূল করে দেয়, তখন তাদের খোঁজখবর কে আর রাখে? তারা কি সত্যিই মুছে যায় ইতিহাসের বিবর্ণ পৃষ্ঠার সঙ্গদোষে? মুছে দেওয়া যায়? ইতিহাস সাক্ষী সিএএ হোক কিংবা এনআরসি; হেরো মানুষের ধ্বংসকালীন সময়ে একটি অদৃশ্য আলপিনও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভয়ংকর এক আয়ুধ হয়ে ওঠে।

চাঁদলাগা চৌষট্টি আশমান

বাংলা কবিতার বাঁক বদলে যে-সমস্ত কবি অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছেন, সমীরণ ঘোষ তাঁদের মধ্যে একজন। তাঁর কবিতার নির্মাণ পাঠককে ভাবিত ও দীক্ষিত করে তোলে। তন্ত্র ও তৎসবন্ধীয় মায়াজাল কখনো কখনো উপজীব্য হয়ে ওঠে তাঁর কবিতায়। অনেক পাঠকই জানেন, ‘চাঁদলাগা চৌষট্টি আশমান’ কাব্যগ্রন্থটি তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য কাব্যসংকলন। এবার ধরা দিল, নতুন মলাটে নতুন সংস্করণে।

চারুর সহজপাঠ

কে বড়ো করে তুলেছিল তাকে? সুখ না বিরহ? সে জানে না। তার মনের চোখে কেবল একটি ছবি ওঠে ভেসে। বাবার হাত ধরে কুর্চি গাছের তলা থেকে কিছু ফুল কুড়িয়ে আনার ছবি। স্মৃতিমাখা গদ্যে লেখা এ বই কিছু মুহূর্তের ফুল হয়ে ফুটে উঠেছে। ছোটো ছোটো সময় যাপন— যে-সময় যাপনের একান্ত স্মৃতি, যে-মনোময় বস্তুপুঞ্জের বিবরণ লেখাগুলিতে আছে তা দেখার দৃষ্টি সকলের থাকে না। কেজো জগতের বাইরে নিত্যকালের আলো অশ্রু নিয়ে এ বই চারুর সহজপাঠ।

চিন্তা

চিরকুট

বেঁচে থাকার দুরূহতা নিয়েই এই আখ্যান… তবু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাবার দায় নেই কাহিনির… সাতের দশকের দগদগে স্মৃতি— বুলেটের— কলকের— অহমের -আপোশের – এরই মাঝে নিজের মধ্যে জলাভূমি-খানাখন্দ-নদীখাত আবিষ্কারে ফুল্ল এই উপন্যাসের জবা শুধু স্বামী পুত্র পরিবারের গণ্ডিতে নয়, বাঁচে ঘেন্টু বুলা দীপা হাপু রমেন কাকু মল্লি আরও খণ্ড খণ্ড অপ্রকাশিত আমির যন্ত্রণায়। চিঠি আর চিরকুটে। অহমের যন্ত্রণা ছুড়ে ফেলে বাঁচে প্রতিরোধ আর সহনের উল্লাসে। নারীবাদের নতুন ডিসকোর্স। নতুন মেয়ে। মৃণালের এই ডিসকোর্স ছিল না। স্ত্রীর পত্রের টেক্সট পুরুষের। চিরকুট নারী-অভিজ্ঞতা। নারীজন্ম। নারীভাষা। স্বতন্ত্র আঙ্গিক। পিতৃতন্ত্রের চাপিয়ে দেওয়া সব শিক্ষা অকেজো এখানে। কথাশিল্পীর দরদী মায়া, তীক্ষ্ণ মাত্রাময় বিশ্লেষণ আর শব্দের সাহসী অথচ মেদুর ব্যাঞ্জনায় উপন্যাসটি উপভোগ্য।