কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের কালজয়ী ছোটোগল্পের সম্ভার, ভিন্নস্বাদের উপন্যাস এমনকী তাঁর সাড়াজাগানো আখ্যানধর্মী রচনা ও শিশু সাহিত্য— সবই বর্তমানের আলোকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই বইতে।
Shipping class: Initial
কবিতার পাশাপাশি বিচিত্র বিষয় নিয়ে গদ্য লিখে চলেছেন পার্থজিৎ চন্দ। বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে চলে যাওয়া এবং আশ্চর্য প্রশ্নের মুখে পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেওয়া তাঁর গদ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইতিহাস অর্থনীতি পুরাণ সন্ত্রাস ইত্যাদিকে আশ্রয় করে এ-লেখাগুলিকে ইন্টারটেক্সক্টচুয়ালিটির নিরিখে বিচার করা যেতে পারে। চুম্বকের মতো টেনে রাখে তার ভাষার জাদু; কবির গূঢ় অন্বেষণের এক অনুপম নিদর্শন এ-গ্রন্থ।
অনুপম মুখোপাধ্যায়, একটি কাব্যগ্রন্থ থেকে আরেকটি কাব্যগ্রন্থ যেতে গিয়ে বারবার নিজেকে ভেঙেছেন। এই ভাঙনের মুখে কখনো তিনি হিরো, কখনোবা অ্যান্টি হিরো। সমালোচনা বা প্রশংসার জোয়ারে না ভেসে তিনি একেরপর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। এই কাব্য সংকলন থেকে বাংলা কবিতা ও অনুপম মুখোপাধ্যায়ের কবিতার বাঁক সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
পল্লব ভট্টাচার্য একজন নীরব সাধক। সমস্ত কোলাহল দূরে সরিয়ে লিখে চলেছেন কবিতা।উৎসাহী পাঠকেরা গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকেন তাঁর কবিতার জন্য। তাঁর প্রথম দিকের কাব্যগ্রন্থগুলি পাঠকের কাছে সহজলভ্য ছিল না। এই ‘স্বনির্বাচিত কবিতা’ গ্রন্থটি পাঠকের সেই তৃষ্ণা মেটাবে। তাঁর কবিতার মগ্নতায় ডুব দিয়ে আহরণ করতে পারবেন নতুন প্রাণরস।
অপর সাহিত্যের কবি ও লেখকদের মধ্যে ইন্দ্রনীল ঘোষ এক উল্লেখযোগ্য নাম। কুড়ি বছরেরও বেশি সাহিত্যজীবনে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গেছে তাঁর শৈলী। কখনো পরিচিত শব্দকে অন্যভাবে বাজিয়ে তোলার ঝোঁক তাঁর লেখাকে বিশেষ করে তুলেছে, কখনো তাঁকে দেখা গেছে নেশেন্ট কবিতার খোঁজে, কখনো-বা গ্রাফ কবিতার মধ্যে দিয়ে রিডার রেসপন্সের অলিগলি বুঝতে চেয়েছেন তিনি। ইন্দ্রনীল বিশ্বাস করেন, সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়েও কবিতার গতি আসলে সহজের দিকে। বর্তমান বইতে রইল তাঁর এযাবৎ লিখিত কবিতাগুলির থেকে নির্বাচিত কিছু কবিতা। আশা করা যায় কবিকৃত এই নির্বাচন তাঁর কবিতা সম্পর্কে আরও আগ্রহী করে তুলবে পাঠকদের।
সরদার ফারুক কবিতায় নিবেদিত এক প্রাণ। তাঁর কবিতা সহজাত। বাউলিয়ানা। কখনো রাজনৈতিক। গভীর জীবন দর্শনবোধের। এযাবৎ তাঁর প্রকাশিত সমস্ত কাব্যগ্রন্থ থেকে বাছাই করে প্রস্তুত করেছেন ‘স্বনির্বাচিত কবিতা’-র পাণ্ডুলিপি। যোগ হয়েছে অগ্রন্থিত কবিতাও। ১৯৮০ সাল থেকে তাঁর কবিতা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও প্রথম বই প্রকাশিত হয়েছে ৩২ বছর পরে, ২০১২ সালে। সেটাও আকস্মিক একটি ঘটনার কারণে। না হলে হয়তো এখনও অপ্রকাশিতই থেকে যেতেন। আশা করা যায়, এই কবিতা সংকলন থেকে পাঠক কবি সরদার ফারুকের কবিতা ও তাঁর সম্পূর্ণ যাত্রাপথের আভাস পাবে।
“কবিতা এসেই নেশার মতো চেপে ধরে চারিদিকের জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলতে শুরু করে, মানুষের মুখ অস্পষ্ট করে দেয়। নিত্যনতুন সব জিনিসকে, আপাততুচ্ছ জিনিসকে মূল্যবান করে তোলে। নিজের জীবনের ব্যথা-বেদনা অবশ করে দেয়। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তি। তারপর থেকে পার্থিব যত কাজ করেছি, করেছি অনুপস্থিত থেকে। খুব কম কেউ, বা কেউই নয়, টের পেত আমার অনুপস্থিতি। নিজের বোনা জালে দিনে দিনে আবদ্ধ হয়ে পড়ি। আবদ্ধ অংশের মধ্যেই ছিল এক বস্তুর সমান শূন্যতা।”
‘হাথক দরপণ’ নামের অত্যাশ্চর্য এই বইটির… মিতায়তনে গড়া কথাকল্প, যা পরম আস্বাদ্য ও আগাগোড়া জাদুকাহিনির মোহঘেরা।… তাঁর রচনায় কোনও কষ্টকল্পিত অতিশয়োক্তি বা অকারণ ভাবোচ্ছ্বাস নেই।… রামচন্দ্র প্রামাণিক আসলে ধরতে চেয়েছেন এক অধুনালুপ্ত যাপনপর্বের সমাজ-ইতিহাস।… সারা বইটিতে ঝকমক করছে এক দ্রষ্টা কবিচিত্ত যা গ্রামাশ্রয়ী অথচ যাতে রয়েছে নাগরিক পরিশীলিত মননের মাধুরী।
(সুধীর চক্রবর্তী, ‘দেশ, বিশেষ বই সংখ্যা)
স্মৃতিকথন তথা আত্মজীবনীর যে শৈলীর সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠ, “হাথক দরপণ” ঠিক সেরকম নয়। এই লেখায় ‘আমি’ থেকেও নেই।… লেখকের গ্রাম এখানে মধ্যমণি। কথাসাহিত্যের মায়াময় গদ্যশৈলী এবং উপস্থাপনা ওই ইতিহাস চর্চাকে প্রাণবান করেছে। রামচন্দ্রের উপস্থাপনা যেন কথা বলে।
(তপস্যা ঘোষ, ‘বারোমাস’)
নির্দ্বিধায় বলা যায়, এ বইটি বাংলা কথাসাহিত্যে অনেকদিন স্থায়ী হবার ভাগ্য নিয়ে এসেছে।
(দেবারতি মিত্র, ‘কালের কষ্টিপাথর’)
রামচন্দ্রের অবলোকন অতি স্বচ্ছ। ‘হাথক দরপণ’ বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। মাথায় তুলে নেওয়ার মতো এ বই।
(মৃদুল দাশগুপ্ত, ‘আজকাল’)