দুঃখ সাঁতার
আমি একা একটি শব্দ
প্রেমিকাকে মনে রাখতে হয়
ভেজানো আগুনের শীর্ষদেশে…
ধরিত্রী
– কিচ্ছু খাবার নাই ঘরে? মেঝেতে বসে সুবল একবার মিনমিন করে মিনতির দিকে তাকিয়ে বলে। মিনতি ফিরেও তাকায় না ওর দিকে। তার মানে নেই। নেই মানে তো নেই। কেন নেই, সে গল্প আর নতুন করে পেড়ে কী হবে! কাজেই সুবলকে বেরোতেই হবে। যদি না বেরোয়, দুপুরেও নেই, রাতেও। কিন্তু বেরোতে পারবে কী? এমনিতে বৃষ্টি ধরার নামগন্ধ নেই। তার উপর আজ যেন কেমন খিমচে খিমচে ধরছে বুক আর পেটের ভিতরে। শেষ খেয়েছিল কাল দুপুরে। দুটো পাউরুটি। তার থেকে আবার খানিকটা দিতে হয়েছিল মিনতিকে। বড়ো ছেলেটা ওর ভাগের থেকে খাবলা মেরে পালিয়েছিল। কাজেই খিদের আর দোষ কী!
কিছুটা এগিয়ে গেলে, বাঁ দিকে সামান্য বাঁক নিলে, হাটখোলার মোড়। স্থায়ী দোকানপাট। ঝিমানো। কখনও কখনও লোকজন আর টুকটুকি অটো আর ক্লান্ত বিষণ্ণ রাতজাগা গরুযান। আরও একটু এগিয়ে গেলে পাকা রাস্তা। হাইরোড। বাস স্ট্যান্ড। শত প্রাচীন একটি নিম গাছ। নিম গাছের নীচে কুড়িয়ে নেওয়া পাথরের থান, সিন্দুরের বৈভব ছড়ানো, তেলচিটে। পাশে মাটির পুতুলের দোকান। বাসযাত্রীরা বাসে ওঠা ও নামার আগে মাটির পুতুলের দোকানের দিকে একবার তাকাবে, কেউ কেউ পুতুলের দোকানের সামনে এসে দাঁড়াবে। পরের পর কাঠের পাটাতনের ওপরে সারি সারি মাটির পুতুল। কত ধরনের পুতুল।
কুকুর
১
মেঘলা আকাশ। বৃষ্টি যেকোনো সময় তেড়ে আসতে পারে। আসলে মন্দ হয় না। ক-দিন ধরে গুমোট আবহাওয়া। শরীর হাঁসফাঁস করছে। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় যাইহোক অনি নিয়ম করেই বইপাড়ায় আসে। কাজ থাকুক বা না-থাকুক। কফিহাউস ঢুকতে ওর বিরক্ত লাগে। কলেজ স্কোয়ারের ভিতরটাতেই বসে। অনির ভালোলাগে মানুষজন পর্যবেক্ষণ করতে। তিন থেকে তিরাশির কত মানুষজন! কেউ কেউ আসে পাঁচ থেকে পনেরোর ছেলেমেয়েকে নিয়ে সাঁতার শেখানোর জন্য। অবসারপ্রাপ্ত বুড়ো-বুড়িরাও আসে সান্ধ্যআড্ডায়। আর প্রেমিক-প্রেমিকা বা বন্ধু-বান্ধবী? শহরের এমন একটা পার্ক থাকলে কেউ কি পারে তা অবহেলা করতে?
বর্মণটাড়ি
১
হাট আবহমানের। হাট চিরন্তন। হাটের কোলাহল থেকে সরে এসে হেরম্ব নেমে যাচ্ছে মাঠঘাটের ভিতর। দোলাজমি অতিক্রম করছে সে। অতিক্রমণের নির্দিষ্ট কোনো মাপকাঠি না থাকলেও দ্রুতগামী হবার সমূহতর সম্ভাবনা হেরম্বকে তাড়িত করে। একা হতে হতে একসময় সে একাকিত্ব সংশয় ঝড়জল ও ঘামের নোলক ঝোলানো মদিরতায় মেদুর সত্যকথনের পাশে গলা ঝাড়ে।
উনিশ শতকের কলকাতার বারাঙ্গনা কন্যারা ও তাদের আলোয় ফেরার কিছু কথা
নগরসভ্যতা আর পতিতাবৃত্তি প্রায় সমবয়সি। মধ্যযুগে নগরসভ্যতার অন্যতম ভূষণ ছিল বারাঙ্গনা পল্লি। বারাঙ্গনা সংসর্গ ছিল মধ্যযুগীয় পৌরুষ ও আভিজাত্যের প্রতীক। সে-সব অন্য প্রসঙ্গ। আমি বুঝতে চাইছি আঠেরো/ উনিশ শতকের কলকাতার বারাঙ্গনা সমস্যার উদ্ভব ও তাদের আলোয় ফেরার কথা।
আধুনিক শহরের সমস্ত কদর্যতাকে সঙ্গে নিয়ে নগর কলকাতার ক্রমবিকাশ হয়েছিল আর এদেশে বারাঙ্গনা বৃত্তির উদ্ভব বৃটিশ শাসনের হাত ধরেই। কলকাতার নগরায়ন শুরু হয় পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে। সংবাদপত্র দূরের কথা ছাপার যন্ত্রের কথাও তখন কল্পনায় ছিল না। শৈশবের কলকাতায় লোকসংখ্যাই বা কত! ১৭১০ সালে কলকাতা, গোবিন্দপুর ও সুতানুটি যে তিনটি গণ্ডগ্রাম নিয়ে কলকাতা নগরীর পত্তন হয়েছিল সাকুল্যে তার লোকসংখ্যা ছিল দশ হাজার।
মাতৃত্বের সংজ্ঞায় কুয়াশা
মুম্বাইয়ে প্রতিদিনই সংবাদপত্রে পড়ি, একটি নবজাতককে সমুদ্রের ধারে বা ট্রেনলাইনের পাশে বা বাইপাসের ভেতরে, যে জায়গাগুলো রাতের বেলায় অন্ধকার, কাপড়ে মোড়া পাওয়া গেছে।
এক বা দুই দিনের সেই শিশু ছেলেও হতে পারে বা মেয়েও হতে পারে।
চিনের মতন বা বহু খ্রিস্টধর্মী দেশের গির্জার মতন, আমাদের দেশে অবাঞ্ছিত, অপ্রার্থিত, অনাবশ্যক সন্তানকে লুকিয়ে রেখে যাবার বন্দোবস্ত নেই, যে সন্তানটিকে রাষ্ট্র বা গীর্জা পালন করার দায়িত্ব নেবে।