শীতকাল কেন আসবে সুপর্ণা
১
ঘড়িতে রাত প্রায় তখন দুটো। গায়ের ওপর থেকে পাতলা চাদরটা সরাই আমি। পাশেই বিউটি।
আপাতভাবে মনে হতে পারে, মানুষ গৃহবন্দি। সে একটা জেলখানায় ছোট্ট খুপরিতে আটকে আছে। কিছু মানুষের জন্য তা তো বটেই। যারা ছোট্ট একটা ঘরে নিজের বিছানা আর সামান্য কিছু আসবাবে নিজেকে স্বেচ্ছাবন্দি করেছে। সামান্য আকাশও দেখা যায় না, সেই ঘর থেকে। একতলার ঘর, তাই জানালা খোলাও সমীচীন নয়। বে-আব্রু হয়ে পড়ার আশঙ্কা, একটা মানসিক ব্যাধি জন্মানোর আদর্শ চৌখুপি।
নিজেকে আজকাল একটা ঘোটকীর মতো লাগে রোশন আরার। খাদের কিনার ঘেঁষে ঘাস খেতে খেতে পাহাড়ের চূড়া ছুঁতে চাওয়া ঘোটকী। পিঠে তার আট হাতপাওয়ালা রশিদা বেগম, করিমন বিবি আর করিমন বিবির তেত্রিশ হপ্তা বয়সী পেট। জমানো সব সঞ্চয় শেষ হয়ে আসছে তার। একইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করিমন বিবির জঠর। ওই পেটের দিকে তাকালেই দম বন্ধ হয়ে আসে রোশন আরার।
“পদ্মায় ইলিশ মাছ ধরার মরশুম চলিয়াছে। দিবারাত্রি কোনো সময়েই মাছ ধরিবার কামাই নাই। সন্ধ্যার সময় জাহাজঘাটে দাঁড়াইলে দেখা যায় নদীর বুকে শত শত আলো অনির্বাণ জোনাকির মতো ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। জেলে–নৌকার আলো ওগুলি। সমস্ত রাত্রি আলোগুলি এমনিভাবে নদীবক্ষের রহস্যময় ম্লান অন্ধকারে দুর্বোধ্য সংকেতের মতো সঞ্চালিত হয়। একসময় মাঝরাত্রি পার হইয়া যায়।